সিনিয়র ক্রীড়া সম্পাদক অজয় বড়ুয়া আর বেঁচে নেই

271

ঢাকা, ১২ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক,দৈনিক সংবাদের ক্রীড়া সম্পাদক অজয় বড়ুয়া (৭১) আর বেঁচে নেই। লন্ডনের সেন্ট বার্টস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৭ টা ২০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র,দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মরদেহ ঢাকায় আনা হবে।
দৈনিক সংবাদের হয়ে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সংবাদ সংগ্রহ করতে গত ৩১ মে সস্ত্রীক লন্ডন যান তিনি। বাংলাদেশের প্রথম তিনটি ম্যাচের সংবাদও সংগ্রহ করেন। জুনের শেষ সপ্তাহে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিন জ¦রে ভোগার পর ২৩ জুন লন্ডনের কিং জর্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিওমোনিয়া, হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিলতায় পরবর্তীতে তাকে সেন্ট বার্র্টস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই হাসপাতালেই তার হৃদপিন্ডে ঢাকায় স্থাপন করা পেসমেকার খুলে সাময়িকভাবে স্থাপন করা হয়। সফল অস্ত্রোপাচারের পর জ্ঞান ফিরলেও তিনি আর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরেননি। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিলেন। ৮ জুলাই থেকে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয়টি নিশ্চিত হন তার পরিবার। এর কয়েক ঘন্টা পরেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অজয় বড়–য়া ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও চট্টগ্রাম কলেজে এসএসসি, ইন্টারমিডিয়েটের পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে গণিতে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই তার ক্রীড়ার প্রতি ঝোক। বিশ^বিদ্যালয়ে ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের হয়ে পশ্চিম পাকিস্তান সফর করেন। বিশ^বিদ্যালয়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান স্বরূপ সম্মানজনক ‘ব্লু’ পদক পান তিনি। জগন্নাথ হলের ক্রীড়া সম্পাদকও ছিলেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনীর হয়ে ফুটবলও খেলেছেন। ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতির ( ছাত্র ইউনিয়ন) সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন অজয় বড়–য়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাংবাদিকতায় নিজের ক্যারিয়ার গড়ার মনোনিবেশ করেন। স্বাধীনতার পর থেকেই ক্রীড়া ও বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে দৈনিক সংবাদে ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সংবাদের ক্রীড়া সম্পাদক ও ইউনিট চীফ’র দায়িত্বরত ছিলেন। পেশাগত জীবনে তিনি অনেক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কভার করেছেন। ১৯৮০ সালে ব্যাংককে যুব এশিয়ান ফুটবল টৃর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে তার দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কভার করা শুরু। পেশাগত কাজে তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ দলের প্রথম বিশ^কাপও তিনি সংবাদের হয়ে কভার করেন।
দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের অন্যতম সিনিয়র সদস্য, ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য,পেশাদার রিপোর্টারদের অন্যতম সংগঠন ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সদস্য, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন দৈনিক সংবাদ-এর ইউনিট চীফের দায়িত্ব পালন করেন। অজয় বড়–য়ার হাত ধরে অনেকে ক্রীড়া সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন এক বিবৃতিতে বর্ষীয়ান সাংবাদিক অজয় বড়–য়ার মৃত্যুতে শোক এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন। নেতৃবৃন্দ শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।