মেসিকে সামনে রেখেই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে লড়তে চায় আর্জেন্টিনা

257

নিজনি নোভগোরোদ, ২০ জুন ২০১৮ (বাসস) : বৃহস্পতিবার ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ-ডি’র নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। আর গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচকে সামনে রেখে অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে সামনে রেখেই দল উজ্জীবিত হবার অনুপ্রেরণা খুঁজছে।
এর আগে পুঁচকে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে বিশ্বকাপের শুরুটা মোটেই ভাল করেনি গতবারের রানার্স-আপ দলটি। মূলত মেসির পারফরমেন্সে হতাশ হতে হয়েছে পুরো দলকে। কিন্তু তারপরেও কোনভাবেই তারা মেসির ওপর আস্থা হারাতে চায়না। প্রথম ম্যাচের হোঁচটের পরে গ্রুপে আর্জেন্টিনাকে একমাত্র দল হিসেবে ক্রোয়েশিয়ার শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে কাল পড়তে হচ্ছে। প্রথম ম্যাচে মড্রিচ, মানজুকিচ, রাকিটিচদের কল্যাণে নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে সহজেই পরাজিত করে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান ইতোমধ্যেই দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। সে কারনে আইসল্যান্ডের সাথে ড্র এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে বড় শঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরেকটি প্রতিকূলতার মাঝে এখন দাঁড়িয়ে আছে আর্জেন্টিনা। ২০০২ সালের পরে প্রথমবারের মত গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় না হয়ে যায় কোটি ভক্তের প্রিয় এই দলটি। যদিও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পরাজিত হলেও আর্জেন্টিনার সামনে নক আউট পর্বে যাবার সম্ভাবনা থাকবে।
দলের সাবেক কিংবদন্তী দিয়েগো ম্যারাডোনা আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পয়েন্ট হারানোর বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তার মতে এতে দলের মর্যাদা হানি হয়েছে। এতটাই ক্ষুব্ধ তিনি হয়েছেন যে এই ধরনের পারফরমেন্স আবারো হলে কোচ জর্জ সাম্পাওলি আর্জেন্টিনায় ফিরতে পারবেন না বলেও ম্যারাডোনা সতর্ক করে দিয়েছেন।
ম্যাচটিতে মেসির পেনাল্টি মিসের সাথে সাথে ১১টি ব্যর্থ শট আর্জেন্টিনাকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেয়নি। ১৯৭০ সালে ইতালির লুইগি রিভারের পরে বিশ্বকাপের কোন ম্যাচে একজন খেলোয়াড়ের এটাই সর্বোচ্চ ব্যর্থতা। যদিও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা দ্রুতই প্রথম ম্যাচের তিক্ততা ভুলে বার্সেলোনা সুপারস্টারের পক্ষেই কথা বলেছেন। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার পাওলো দিবালা বলেছেন, ‘আমরা সবাই তার সাথে আছি। সে নিজেও জানে অন্যান্য যেকোন সময়ের তুলনায় এবার সে আমাদের সকলের কাছ থেকে অনেক বেশী সমর্থন পাবে। প্রতিটি মুহূর্ত আমরা তাকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছি। অবশ্যই আমরা তার পাশে আছি।’
এদিকে ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান আনসালদি বলেছেন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থতা সত্তেও মেসি মানসিক ভাবে শক্ত আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে মেসি আমাদের দল ও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। সে শুধুমাত্র বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় নন, মাঠেও সে সকলের সেরা। সে দারুন ফর্মে আছে এবং এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক।’
আইল্যান্ডের বিপক্ষে এক পয়েন্ট অর্জিত হলেও পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনারই দাপট ছিল। ২৬টি শট এবং ৭২ শতাংশ বল পজিশন তারই প্রমান। কালকের ম্যাচে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি পরিবর্র্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তরুন ফরোয়ার্ড ক্রিস্টিয়ান পাভোনকে এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার জায়গায় দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে আক্রমনাত্মক কৌশলে খেলারই সম্ভাবনাই বেশী বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যে কারনে মধ্যমাঠে লুকাস বিগলিয়ার জায়গায় প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইর গিওভানি লো সেলসোকে মূল একাদশে দেখা যেতে পারে। আক্রমনভাগে বরাবরের মত মেসির নেতৃত্বে আরো থাকবেন আইসল্যান্ডের সাথে গোল করা সার্জিও আগুয়েরো। ৩-৩-৩-১ ফর্মেশনেই তাদের খেলার সম্ভাবনা বেশী।
অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একটু বাজে পারফরমেন্সই পুরো পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। বিশ্বকাপের আসার আগে দলের মানসিক পরিস্থিতি খুব একটা ভাল ছিলনা। দলের অধিনায়ক মাদ্রিদ তারকা লুকা মড্রিচের বিপক্ষে দূর্নীতির অভিযোগ পুরো ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলকে সমালোচিত করেছে। পিঠের ইনজুরির কারনে স্ট্রাইকার নিকোলা কালিনিচ দেশে ফিরে গেছেন। কোচ জøাটকো ডালিচ ইনজুরির কথা বললেও ক্রোয়েশিয়ান গণমাধ্যমের দাবী প্রথম ম্যাচে মূল একাদশে খেলার সুযোগ না পেয়ে বদলী হিসেবে মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কালিনিচ। যে কারনে ক্ষুব্ধ টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।
যদিও মাঠের বাইরের বিষয়গুলো এখন আর ক্রোয়েশিয়াকে ভাবাচ্ছে না। কাল তারা অপরিবর্তিত দল নিয়েই মাঠে নামবে।
এর আগে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে দুই দলের একবারই দেখা হয়েছিল। ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে জয়ী হয়।