বাজিস-২ : জয়পুরহাটে বেরইল গ্রামের মানুষের জীবিকা চলে খলসানি তৈরি করে

384

বাজিস-২
জয়পুরহাট-খলসানি
জয়পুরহাটে বেরইল গ্রামের মানুষের জীবিকা চলে খলসানি তৈরি করে
॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ২০ জুন, ২০১৮ (বাসস) : বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার যন্ত্র চাঁই তৈরি (স্থানিয় নাম খলসানি) করে শত বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে জয়পুরহাটের বেড়ইল গ্রামের প্রায় ৪শ পরিবার। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে সরবরাহ করা হয়ে থাকে । বছরের ৬ মাস তাদের ব্যবসা ভাল চললেও বাকি ছয় মাস অভাব-অনটনে কাটে তাদের সময়। তারপরও বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকরে ধরে আছেন ওই গ্রামের মানুষ।
বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই খলসানির চাহিদা তুলনামূলক বেড়ে যায়। সে কারণে জেলার বেড়ইল গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিশেষ এক ধরনের ফাঁদ খলসানি বানানোর কাজে। স্থানীয়ভাবে এর নাম খলসানি হলেও কোথাও কোথাও চাঁই বা ঢেউল নামেও পরিচিত এ যন্ত্রটি। জৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত খলসানি বিক্রি থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে আনন্দে দিন কাটে তাদের। বছরের বাকি ৬ মাস অন্য কাজ করে কোন মতে সংসার চালাতে হয় বলে জানালেন বেরইল গ্রামের খলসানি তৈরি কারক ও বিক্রেতা রবীন চন্দ্র।
এক সময় জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-দিঘী ও ধানক্ষেত পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় বাশের তৈরি মাছ ধরার এ বিশেষ ধরনের যন্ত্র খলসানির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন আর সে অবস্থায় নেই। সে স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কারেন্ট জাল। ফলে হাট-বাজারে খলসানির আমদানির তুলনায় বেঁচা-বিক্রি কম বলে জানালেন খলসানি বিক্রেতা মোকলেছার রহমান। তবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে এখানকার তেরি খলসানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেও জানান তিনি। বাজারে এখন প্রতি পিস খলসানি বিক্রি হচ্ছে ছোটগুলো ১২৫ টাকা আর বড়গুলো ২৫০ পর্যন্ত।
রুচির পরিবর্তন আর যান্ত্রিকতার দাপটের পরেও এ হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য শত বছরের পুরনো বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকরে ধরে বাঁচার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেরইল গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলো। সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা বা ঋণের সুবিধা পেলে তাদের এ পৈত্রিক ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব হতো বলে জানান, বেরইল গ্রামের খলসানি তৈরিকারক অরুন চন্দ্র।
সরকারি-বেসরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে একদিকে যেমন রক্ষা পাবে এ নান্দনিকতা পূর্ণ হস্তশিল্পটি অন্যদিকে খলসানী তৈরির কারিগররা খুজে পাবে স্বাবলম্বী হবার পথ, এমন প্রত্যাশা করছেন বেরইল গ্রামের দরিদ্র পরিবার গুলোর।
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১০৫৫/নূসী