বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (প্রথম কিস্তি) : বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে যুক্ত করার মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী

518

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (প্রথম কিস্তি)
শেখ হাসিনা-প্রেস কনফারেন্স
বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে যুক্ত করার মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ৮ জুলাই ২০১৯ (বাসস) : রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে একীভূত করার সাম্প্রতিক প্রস্তাবকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে একে একটি ’গর্হিত কাজ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব না করে রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে নিজদেশে ফেরত যেতে পারে সেই প্রচেষ্টাই তার করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সীমানা রয়েছে ৫৪ হাজার বর্গমাইল বা ১ লাখ ৪৭ হাজার বর্গ কি.মি. আমরা তাতেই খুশী। অন্যের কোন জমি নেয়া অন্য কোন প্রদেশকে আমাদের সাথে যুক্ত করাকে আমি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। এ ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ বলে আমি মনে করি। এই প্রস্তাব কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বরাদ্দ সংক্রান্ত কংগ্রেসের শুনানীকালে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান ব্রাডলি শেরম্যানের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আজ বিকেলে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণেই আমরা আশ্রয় দিয়েছি। আর আশ্রয় দেওয়ার মানে এটা নয় যে, আমরা তাদের রাষ্ট্রের একটা অংশ একেবারে নিয়ে চলে আসবো। এই মানসিকতা আমাদের নেই। এটা আমরা চাই না।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের এশিয়া প্যাসিফিক সংক্রান্ত উপকমিটির চেয়ারম্যান শেরম্যানকে তার দেশে এক সময়ে চলা দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন কোন কিছুই করবে না, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে বা অশান্তির সৃষ্টি করে।’
তিনি বলেন, ‘ঐ কংগ্রেসম্যানের কিন্তু অতীত ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, এক সময়ে তাদের গৃহযুদ্ধ লেগে থাকতো। আর সেই দিন যে ভবিষ্যতেও আসবে না সেটা কিভাবে তারা ভাবে।’ ‘রাখাইন স্টেটে প্রতিনিয়ত যে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে আমরা জেনে বুঝে ঐ ধরনের একটা গোলমেলে জিনিসের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবো কেন, প্রশ্ন উত্থাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কখনই তা করবো না।’
শেখ হাসিনা মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বলেন, ‘প্রতিটা দেশ যার যার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। মিয়ানমারও তাঁর সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। আর এটাও চাই, মিয়ানমার যেন তার নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যায়।’
তাদের রাখাইন স্টেটে মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিষয়টি দেখা উচিত তাই বলে কোন দেশের অভ্যন্তরে কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করে নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘এখানে মানবতা লঙ্ঘনের যা কিছু হচ্ছে তাদের সেটা দেখা উচিত। এভাবে একটা দেশের ভেতর গোলমাল পাকানো কোনভাবেই ঠিক নয় এবং যেখানে তারা হাত দিয়েছে সেখানেই তো আগুন জ্বলছে কোথাওতো শান্তি আসেনি বরং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছে। অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এই অঞ্চলে একটু শান্তিপূর্ণভাবে থাকার চেষ্টা করছি এখানেও তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে এদিনের সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলেও রোহিঙ্গা প্রসংগ,সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং বেশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঘুরে ফিরে আসে।
১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং’র আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা ৫ দিনের সরকারী সফরে চীনে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর এবারের চীন সফরে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং, প্রেসিডেন্ট শী জিনপিং এবং চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে আমি বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরি। এ সব আলোচনার সময় সকল নেতাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।’ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ,প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রকি মিডিয়া এবং সংবাদ সংস্থার সম্পাদক এবং সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
চলবে-/বাসস/এএসজি-এফএন/এসএইচ/২১১০/কেএমকে