নীলফামারীতে তিস্তার চরে ভুট্টা চাষে কৃষকের ভাগ্য বদল

735

নীলফামারী, ১৮ মার্চ, ২০১৭ (বাসস) : জেলার ডিমলা উপজেলার তিস্তার চরের পূর্বছাতনাই গ্রাম। তিস্তা নদীর বালিভরা গ্রামটি এক সময়ে পড়ে থাকতো মরুভূমির মতো। এখন সেই বালির গ্রামটিও আর পতিত নেই। কৃষকরা গ্রামটিকে ভরে ফেলেছেন ভুট্টার আবাদে। সবুজে ভরা গ্রামটির কোন অংশ বাদ পড়েনি ভুট্টার আবাদ থেকে।
গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ (৩০) বলেন, ‘বর্ষায় নদীর পানিতে ভরে থাকে গ্রামটি। শুকনো মৌসুমে নদীর বালিভরা গ্রামটির জমি এক সময়ে পড়ে থাকতো মরুভুমি হয়ে। এখন ওই বালিভরা জমিতে আমরা আবাদ করছি বিভিন্ন জাতের ভুট্টা। ফলনও ভালো হচ্ছে।’
তিনি জানান, বালির জমিতে বাদাম, পিয়াজসহ অন্যান্য ফলস ফলানোর চেষ্টা করে আশানুরূফ ফলন না পাওয়ায় বিকল্প ফসলের দিকে ছুটে কৃষক। আর বিকল্প হিসেবে ভুট্টার চাষে সফল হয়েছে তারা।
ওই গ্রামের অপর কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন,‘অন্য ফসলে লোকশান হওয়ায় সকলে ঝুঁকে পড়েছেন ভুট্টার আবাদে। গত কয়েক বছর ধরে আবাদ করে কৃষরা অনেকটাই স্বচ্ছল হয়েছেন।’
কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন,‘ শুধু আমাদের গ্রামই নয়, তিস্তার সকল চরের গ্রামে এখন ব্যাপক ভুট্টার চাষ হচ্ছে। এতে লাভ বেশী হওয়ায় কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। শুধু আমাদের গ্রামই নয়, তিস্তার চরের সকল গ্রাম এখন ভুট্টার আবাদে ভরে গেছে।’
তারা সকলে জানান, গত কয়েক বছর ধরে আবাদ করে প্রতি একরে ১২৫ মণের মতো ভুট্টা পাচ্ছেন কৃষক। প্রতি মণ ভুট্টার বাজার দর ৬০০ টাকা হিসাবে একরে ৭৫ হাজার টাকার ফসল পাওয়া যায়। সেখানে একর প্রতি উৎপাদন খরচ হয় ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন,‘ভুট্টার আবাদ চরের কৃষকদের ভাগ্য বদল করে দিয়েছে। তারা সকলে ভুট্টার আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আগে এসব জমিতে অন্য ফসল ফলাতে গিয়ে লোকশানের মুখে পড়েছিলেন তারা। এজন্য কৃষকদের অভাব অনটন লেগেই থাকতো। এখন আর সেই অভাব নেই কৃষকদের মধ্যে। সকলেই ভুট্টার আবাদে স্বাবলম্বী হয়েছেন, দিন দিন আরো উন্নতি করছেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় এবারে ১৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভ্ট্টুা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ, ৭০ হাজার, ১৮৮ মেট্রিক টন। সেখানে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার, ৩৯৫ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো আবাদ বেশী হওয়ায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্র কিছুটা ঘাটতি পড়েছে। তবে জেলা চরাঞ্চলে বিকল্প ফসলের সুযোগ না থাকায় সেখানে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আবুল কাশেম আযাদ বলেন,‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে ভুট্টা চাষের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে। জেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের গ্রামে ভুট্টা এখন প্রধান ফসল হয়ে দাড়িয়েছে। ভুট্টা চাষে চরাঞ্চলের অনেক কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে।’