বাজিস-৫ : নতুন উদ্ভাবিত গৌরমতি : ভবিষ্যতের আম

175

বাজিস-৫
নাটোর-গৌরমতি আম
নতুন উদ্ভাবিত গৌরমতি : ভবিষ্যতের আম
॥ ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন ॥
নাটোর, ১৯ জুন, ২০১৮ (বাসস) : দেশের আড়াই শতাধিক জাতের আমের ভিড়ে নিজের অনন্য অবস্থানকে জানান দিচ্ছে সম্প্রতি উদ্ভাবিত গৌরমতি আম। অন্য সব গাছের আম যখন শেষ, তারপর সেপ্টেম্বরে শুরু গৌরমতির মৌসুম। আর মিষ্টতার মাত্রা ২৭ টিএসএস নিয়ে সবচে’ মিষ্টি আমের বৈশিষ্ট্য বহন করছে গৌরমতি। মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে দেশের ৬০টি হর্টিকালচার সেন্টার এবং নাটোরের মডার্ণ হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে গৌরমতি আমের চারা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। বর্তমানে সীমিত উৎপাদনের এ আম ব্যাপকতা পেলে সুস্বাদু আমের শীর্ষ স্থান অনায়াসে দখল করবে।
গৌরমতি আমের উদ্ভাবন সম্পর্কে বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ফল উৎপাদন প্রকল্পের পরামর্শক এবং মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ফলবিজ্ঞানী এস এস কামরুজ্জামান বলেন, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে কিছু আম পাঠানো হয়। অজ্ঞাত জাতের এ আম খেয়ে মুগ্ধতার কথা কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে জ্ঞাত হন মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। প্রকল্পের নির্দেশনায় সংগৃহিত আমের গাছ শনাক্ত করা হয়-চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকার শিয়ালমারা এলাকায়। জাহাঙ্গির মাষ্টারের আশ্বিণা আম বাগান থেকে সংগৃহিত ঐ গাছে তখনো কয়েকটি আম রয়ে গেছে। সংগ্রহ করা হলো আটটি আম, শুরু হলো প্রকল্পের পক্ষ থেকে এ গাছের চারা উৎপাদন কার্যক্রম। পরের বছর মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে ঐ গাছের সব আম কিনে নেয়া হলো আর আম ধরা গাছের নীচে দেশের ৬০টি হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদদের নিয়ে বসলো বৈঠক। বৈঠক শেষে এ গাছের আমের চারা তৈরির জন্যে সবার হাতে তুলে দেয়া হলো গাছের সায়ন (কলম করার উপযোগী গাছের কচি ডগা)। এরপর থেকে সকল হর্টিকালচার সেন্টারে তৈরি থেকে শুরু করে এ গাছের চারা। এখন এসব চারা ফল দিতে শুরু করেছে।
এ আমের নামকরণ সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরগ্রহনকারী ফল গবেষক এস এম কামরুজ্জামান বলেন, প্রাচীন বাংলার গৌর এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবস্থান হওয়ায় গৌর শব্দটি এসেছে আর মতি হচ্ছে মহামূল্যবান- এ দু’য়ের সমন্বয়ে উদ্যানতত্ত্ববিদদের ঐ বৈঠকে আমার প্রস্তাবনায় নামকরণ করা হলো গৌরমতি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের তৎকালীন উদ্যানত্ত্ববিদ এবং বর্তমানে উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ গাছের পাতা ল্যাংড়া আম গাছের মত আর গাছের ধরণ আশ্বিণার মত। এ সম্পর্কে জানতে আমরা সাভারের মাসরুম সেন্টারে এর ডিএনএ পরীক্ষা করাই। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এটি নতুন এক জাত। আশ্বিণা আম বাগানের এ গাছ এক সময় ঝড়ে ভেঙ্গেছিল। এরপর গাছের গোড়া থেকে বের হয় নতুন ডাল। প্রাকৃতিক মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন এক জাতের সৃস্টি। অনন্য এ গাছের জি আই অনুমোদনের জন্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এ আম উপহার হিসেবে এস এম কামরুজ্জামান দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। স্বাদ-গন্ধে মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের নাস্তায় পরিবেশন করা হয় এ আম। আম খাবার পর মন্ত্রীপরিষদের সকল সদস্যগণও মুগ্ধ। সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকল্প পরিচালক এস এম কামরুজ্জামানকে দেয়া হলো ধন্যবাদপত্র।
নাটোর চর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স ম মেফতাহুল বারি জানান, চলতি বছরে নাটোরের দুইটি হর্টিকালচার সেন্টারে দুই হাজার গৌরমতির চারা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটার দাম ৮০ টাকা। তবে চাহিদা অনেক বেশি। নাটোরের মডার্ণ হর্টিকালচার সেন্টারে চাহিদা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে কুড়ি হাজার চারা। এ সেন্টারে চারার দর প্রতিটি একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা।
নাটোরের সফল ফল উৎপাদক গোলাম মওলার জামনগরের বাগানে চলতি মৌসুমে আটটি গৌরমতির গাছে অন্তত চার মণ আম ধরেছে। এবার তিনি এ আম বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করবেন বলে জানান। অফ সিজন হওয়ার কারণে গত বছরের মত এবারো কেজি প্রতি গড়ে পাঁচশ’ টাকা দর থাকবে বলে এ ফল ব্যবসায়ীর ধারণা। সামনের মৌসুমে এ বাগানে পাঁচ শতাধিক গাছ থেকে অন্তত কুড়ি মণ ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
সুমিষ্ট স্বাদের সাথে কিছুটা টক গন্ধ গৌরমতিকে করেছে অনন্য। অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে এ আম চাষ ছড়িয়ে যাবে সারাদেশে। সেপ্টেম্বরের এ আম যে সবার কাছে আদরনীয় হবে এ আশা কখনোই অমূলক হবে না।
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১২৪০/নূসী