মুস্তাফিজের ৫ উইকেট শিকারের পর ভারতের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩১৪ রান

632

বার্মিংহাম, ২ জুলাই ২০১৯ (বাসস) : কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে দ্বাদশ বিশ্বকাপের ৪০তম ম্যাচে রানের পাহাড় গড়ার পথ পেয়েও তা করতে পারেনি ভারত। ফিজের ৫ উইকেট শিকারে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৪ রান করেছে টিম ইন্ডিয়া। ভারতের রোহিত শর্মা ৯২ বলে ১০৪ রান করেন।
বার্মিংহামের এডজবাস্টনে ডু-অর-ডাই ম্যাচে টস ভাগ্যে জিততে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত ভারতের। ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশ বোলারদের দেখেশুনে খেলেন ভারতের দুই ওপেনার ইনফর্ম রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান তুলতে পারেন তারা। এসময় মাত্র ১টি করে চার-ছক্কা ছিলো রোহিত-রাহুলের। তাই রানের গতি বাড়ানোর পরিকল্পনায় ছিলেন তারা।
পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কার চেষ্টা করে ক্যাচ তুলে দিয়ে জীবন পান ভারতের রোহিত। পঞ্চম ওভারে বল হাতে আক্রমনে ছিলেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ঐ ওভারের চতুর্থ বলটি বাউন্স দিয়েছিলেন ফিজ। সাথে সাথে পুল করে দেন রোহিত। ঐ সময় মিডউইকেট ফিল্ডিং করছিলেন তামিম ইকবাল। বল আকাশে উড়ে যাওয়ায় ক্যাচের জন্য স্কয়ার লেগে দৌঁড়ে যান তামিম। বলের লাইনে গিয়ে বল দু’হাতে নিয়েও পরে ফেলে দেন তামিম। ফলে জীবন পান রোহিত।
জীবন পেলে কি করেন রোহিত, অতীতে রেকর্ড আছে। আজও অতীতের রেকর্ডকে ফিরিয়ে আনলেন তিনি। ৪৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত। পরের ৫০ রান তুলতে আরও কম বল খেলেছেন এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। ৪৩ বল মোকাবেলা করে পরের হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। অর্থাৎ নিজের মুখোমুখি হওয়া ৯০তম বলে এবারের বিশ্বকাপে চতুর্থ সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রোহিত। এসময় ৬টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন রোহিত। ২১৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আজ ২৬তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরির করলেন রোহিত।
সেঞ্চুরির পর আরও একটি বাউন্ডারি মেরে বিদায় নিতে হয় রোহিতকে। বাংলাদেশের মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকারের বলে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৯২ বলে ১০৪ রান করেন রোহিত।
ছয় বোলার ব্যবহার করে ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে পারছিলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। বাধ্য হয়ে সপ্তম বোলার হিসেবে সৌম্যকে আক্রমনে এনে সাফল্য পান মাশরাফি। ৩০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ১৮০ রানে রোহিত-রাহুলের জুটি ভাঙ্গেন সৌম্য। এবারের বিশ্বকাপে, এমনকি বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের নয়া রেকর্ড গড়েন রোহিত-রাহুল।
রোহিতের ব্যাটিং তান্ডবে ঢাকা পড়েছিলো আরেক ওপেনার রাহুলের ব্যাটিং নৈপুন্য। দেখেশুনে খেলে রোহিতকে স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন তিনি। পরে দ্রুত রান তুলে ৫৭তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান রাহুল। রোহিতের বিদায়ের কিছুক্ষণ পর থামতে হয় রাহুলকেও। বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেনে অফ-স্টাম্পের সামন্য বাইরের বলকে কাট করতে গিয়ে উইকেটে পেছনে ক্যাচ দেন রাহুল। ডান-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে দারুন এক ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম।
দলীয় ১৯৫ রানের দুই ওপেনারকে হারিয়েও নিশ্চিন্তে ছিলো ভারত। কারন বড় স্কোরের ভিত যে তারা পেয়ে গেছে। তবে এসময় চিন্তায় ছিলো বাংলাদেশ। ভারতের রানের লাগাম টেনে ধরার পরিকল্পনায় ছিলেন মাশরাাফি। তাই দলের প্রধান বোলারদের দিয়ে আক্রমন চালান তিনি। সেই পরিকল্পনা কাজে দেয়। ৩৯তম ওভারে ভারত শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় বলে ভারত অধিনায়ক কোহলিকে এবং চতুর্থ বলে হার্ডিক পান্ডিয়াকে তুলে নেন ফিজ। গেল পাঁচ ম্যাচে টানা হাফ-সেঞ্চুরি করা কোহলি এবার করেন ২৭ বলে ২৬ রান। তার ইনিংসে ৩টি দৃষ্টিনন্দন চার ছিলো। পান্ডিয়াকে রানের খাতাই খুলতে দেননি মুস্তাফিজ। ২ বল মোকাবেলা করে আউট হন পান্ডিয়া। তাই দলীয় ২৩৭ রানেই চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত।
এ অবস্থায় ভারতকে আরও চাপে ফেলার স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে বাংলাদেশ বোলারদের কাউন্টার অ্যাটাক করেন চার নম্বরে নামা ঋসভ পান্থ। চার-ছক্কায় টাইগার বোলারদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরান তিনি। তাই বড় সংগ্রহের পথেই হাটতে থাকে ভারত।
কিন্তু সাকিবের হাত ধরে দ্রুতই খেলায় ফেরে বাংলাদেশ। ভারতের রানের চাকা দ্রুত ঘুড়ানো পান্থকে সাজঘরে ফেরত পাঠন সাকিব। এবারের আসরে সাকিবের এটি ১১তম উইকেট। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪১ বলে ৪৮ রান করেন পান্থ। ৪৫তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ২৭৭ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন পান্থ। তাই দলকে ৩শ রানের কোটা অতিক্রম করার দায়িত্ব পান ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ও দিনেশ কার্তিক।
কিন্তু শেষদিকে বল হাতে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজ। কার্তিককে ৮ ও ধোনিকে ৩৫ রানে বিদায় দেন তিনি। ততক্ষণে ভারতের রান তিনশ পেরিয়ে যায়। তবে ফিজের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং-এ ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৪ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। কারন শেষ ওভারে ধোনি ও মোহাম্মদ সামিকে আউট করে ম্যাচে নিজের ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মুস্তাফিজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ ও ভারতের বিপক্ষে তৃতীয়বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন ফিজ। তার বোলিং ফিগার ছিলো ১০ ওভার ১ মেডেন ৫৯ রান ৫ উইকেট। এছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষে ১টি করে উইকেট নেন সাকিব-রুবেল-সৌম্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৩১৪/৯, ৫০ ওভার (রোহিত ১০৪, রাহুল ৭৭, পান্থ ৪৮, মুস্তাফিজ ৫/৫৯)।