এই বাজেট উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখবে : প্রধানমন্ত্রী

1176

সংসদ ভবন, ২৯ জুন, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের এবারের বাজেট জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দেশে চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের একটি ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এটাই আমাদের প্রত্যয় এবং এই বাজেট এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা আজ জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় একথা বলেন। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ একটি উন্নত জীবন চায়, তাঁদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়বো।’
তিনি বলেন, আমাদের সরকার রুপকল্প ২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্য পূরণ এবং আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার পূরণের এক কার্যকর মাধ্যম হবে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পেশকৃত জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী এই বাজেটটি।
সংসদ নেতা বলেন, আমি শুধু এইটুকুই বলবো ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমরা এই প্রথম বাজেটটা পেশ করলাম। এ বাজেট আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের এই বাজেট আলোচনায় অনেক সংসদ সদস্য অনেকরকম আলোচনা করেছেন সেগুলো সব আমার কাছে ছিল। আমি মনে করি আমার এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে তাঁদের সেই কথাগুলোর জবাব মোটামুটিভাবে তাঁরা পেয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সংসদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দু’বেলা বাজেট অধিবেশন চলেছে এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক সংসদ সদস্য এখানে উপস্থিত ছিলেন এবং সবথেকে অল্প সময়ের অধিবেশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রেখে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। সেই সাথে আমাদের বিরোধী দলের সাংসদ সহ অন্যান্য সংসদ সদস্যদের আমি ধন্যবাদ জানাই।

তাঁর সরকার প্রথম থেকেই দ্রুত বাজেট বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়ে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঊর্ধ্বে ছিল এবং চলতি অর্থবছরে তা রেকর্ড ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, খাদ্য মূল্যস্ফীতি আমরা ৫ দশমিক ৪ ভাগে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির যখন উচ্চহার হয় আর মূল্যস্ফীতি যখন কম থাকে সেই অর্থনীতির সুফল তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছায়, যার সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করে থাকে। যার জন্য দেশের উন্নয়নটা আমরা একদম প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছি।
বিগত বছরগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জন্য জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে যা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যের চেয়ে বেশি উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আশাকরি প্রবৃদ্ধিও এই শক্তিশালী ধারা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সময়োপযোগী এবং দূরদর্শী নীতি বাস্তবায়নের কারণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে যোগাযোগ, বন্দর, বিদ্যুৎ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য যাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়। কারণ, আমরা বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।
শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর মাধ্যমে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এলক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে। সেবা, পর্যটন, আবাসন ও কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং গৃহীত প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তায়নের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধিকে দ্রুত দুই অংকের ঘরে নিয়ে যাওয়া হবে, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আগামী ২৩/২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধিকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৫০ ডলার, রপ্তানি ৭২ বিলিয়ন ডলার, বিদ্যুৎ সরবরাহ ২৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত ও অতি দরিদ্রের সংখ্যা ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য আমরা স্থির করেছি। আগামী অর্থবছরের বাজেট এসব লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জনগণের সম্পদের দক্ষ ও সুষম বন্টনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈষম্য হ্রাসকে তাঁর সরকার গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলের জনগণ এই বাজেটের উপকৃত হবে।’
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধিকে তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়ন, নারীদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিতকরণ এবং ঝরেপরা রোধ করা ও তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর তাঁর সরকার জোর দিয়েছে এবং সরকারের ২৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সর্বমোট ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও গতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এমপিও ভুক্তি কার্যক্রমের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখায় প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
কারিগরি এবং ভকেশনাল শিক্ষার পাশাপাশি তাঁর সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দাওরায়ে হাদিসকে মাষ্টার্সের সমমান প্রদানে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোড়গোঁড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে ১৩ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন সেবা পাচ্ছে এবং ৩০ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।’
মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাসে তাঁর সরকার ৩ হাজার মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী, অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁদের জন্য চিকিৎসা ও অন্যান্য সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।’
জনমিতিক লভ্যাংশকে কাজে লাগানোর জন্য ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ এই তারুণ্যের শক্তিকে তাঁর সরকার কাজে লাগানোর জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, ‘কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য আইন, নীতি সংস্কারসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা এই বাজেটে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকা যুবকদের মধ্যে স্টার্টআপ মূলধন সৃষ্টির জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব অত্যন্ত সময়োপযোগী। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থের ওপর আগামী আগামী অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার ফলে, রেমিট্যান্স প্রেরণে বর্ধিত ব্যয় লাঘব হবে। প্রবাসীরা উপকৃত হবেন এবং তাঁরা বৈধ পথে দেশে অর্থপ্রেরণে উৎসাহিত হবেন।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের বীমার সুবিধায় আনার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষির অবদান ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। যে কারণে, সরকার সবসময় কৃষিকে অগ্রাধিকার প্রদান করে আসছে।
কৃষিপণ্যকে সহজলভ্য করা, কৃষিউপকরণকে কৃষকদের সাধ্যের মধ্যে রাখা, ভর্তুকি, প্রণোদণা ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানে সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ও সেচ যন্ত্রের বিদ্যুৎ বিলের ওপর রেয়াত প্রদান করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। ৯৭ লাখ ৫৪ হাজার কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পেরেছেন এবং তাঁদের ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাংক থেকে তুলতে পারছেন। ইতোমধ্যেই তাঁদের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা সঞ্চয় হয়েছে।’
তাঁর সরকার বাজেটে থোক বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে প্রথম গবেষণা খাতে বরাদ্দ প্রদানের শুরু করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ১৫০টি উন্নত ফসল উদ্ভাবন ও গবেষণায় তাঁর সরকার অর্থ বরাদ্দ করছে এবং যার সুফল পাচ্ছে কৃষক এবং এই বাজেটেও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ মীমাংসা করে তাঁর সরকার দেশে ব্লুইকোনমির পথকে সুগম করেছে বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উন্নত যোগাযোগ, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি, সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং স্যানিটেশনসহ প্রতিটি গ্রামে শহরের আধুনিক সুবিধাদি সম্প্রসারণ করাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনটি পার্বত্য জেলার উন্নয়নেও তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রথমাবারের মত এবারের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা নামে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সকলের জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সুবিধার সম্প্রসারণে সরকার ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২১ হাজার ৬২৯ মেগাওয়াট।’
তিনি জ্বালানি সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের রামপাল, মাতারবাড়ি এবং পায়রাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগও তুলে ধরেন।
গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য দৈনিক প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন মহেশখালিতে দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বিদ্যুৎ খাতে সোলার এনার্জির সন্নিবেশন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি।
সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণসহ অবতাঠামো নির্মাণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রো রেল, বিভিন্ন মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণসহ ওভারপাস নির্মাণেও তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
রেলওয়েকে একটি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ থেকে ২০৪৫ পর্যন্ত ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার দ্রুতগতির ট্রেন চালুরও আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। একইসঙ্গে ঢাকার সঙ্গে প্রতিটি অঞ্চল যেমন, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-বরিশাল সমস্ত বিভাগীয় শহরের দ্রুত যোগাযোগসম্পন্œ করার একটি পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেখানে নৌ পথ, রেল পথ, সড়ক পথ এবং আকাশ পথ উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণে সরকারের পদক্ষেপসমূহের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। দুর্গম উপজেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালুসহ ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। ‘ফাইভ জি’র পরিকল্পনা রয়েছে এবং দেশে ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানি বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথীবীতে দ্বিতীয় অবস্থানে অবস্থান করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানীর ৪টি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষপটে এই খাতকে একটি দ্রুত বিকাশমান খাত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানী বৃদ্ধিও লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে অবশিষ্ট সকল ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক রপ্তানীতে ১ শতাংশ হারে রপ্তানী প্রণোদনা প্রদানের যে প্রস্তাব এ বাজেটে করা হয়েছে, তা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই প্রনোদণা প্রদানের ফলে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প আরো বিকশিত হবে এবং কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
সরকার প্রধান এ সময় দুর্নীতিকে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় আখ্যায়িত করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরোটলারেন্স নীতির উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেরাও দুর্নীতির আশ্রয় নেয় এবং সমাজে দুর্নীতিটাকে তারা ছড়িয়ে দেয়। এটি একটি ব্যাধির মতো যেন মানুষের একটি মানসিক রোগে পরিণত হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার নীতি হচ্ছে জিরো টলারেন্স। আমি সবসময় জোর দিয়ে বলেছি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে আমাদের প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে।’
আর্থিকভাবে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য এবারের বাজেটে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘খেলাপী ঋণ হ্রাসের জন্য আমাদের অর্থমন্ত্রী যে উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। পাশাপাশি, আমার সুপারিশ থাকবে ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার ১ অংকের মধ্যে রাখার পদক্ষেপ যেন নেয়া হয়।
এটি করা সম্ভব হলে দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে সহযোগিতা করা যাবে এবং প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে গড়ে তোলা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।