প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে দারিদ্র্যের হার আরো হ্রাস পাবে : সরকারি দল

804

সংসদ ভবন, ২৯ জুন, ২০১৯ (বাসস) : প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্যের হার আরো হ্রাস পাবে।
তারা বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশের দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২১ ভাগে নেমে এসেছে।
ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে আজ সকাল ১০ টা ৩৩ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। দুপুর ২টায় সংসদের বৈঠক বিকেল ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ,হ.ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনার ১০ম দিনে আজ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমিন, চিফ হুইপ নূর – ই- আলম চৌধুরী লিটন, পার্বত্য চট্টগ্রম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদু উশে সিং, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সরকারি দলের আসাদুজ্জামান নূর,শহীদুজ্জামাম সরকার, শেখ সালাহ উদ্দিন, অসীম কুমার উকিল, শওকত হাসানুর রহমান রিমন, মহিবুর রহমান, আকবর হোসেন পাঠান, আতাউর রহমান খান, এবাদুল করিম, আহমেদ ফিরোজ কবীর, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাহিন রাজ্জাক, এডভোকেট সাহারা খাতুন, জয়া সেন গুপ্তা, সৈয়দা জাকিয়া নুর, বেগম শাহিন আক্তার, পারভীন শিকদার ও জাতীয় পার্টির মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আরো বেশি প্রত্যাশা থাকার পরও প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে, পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটে এটা বেড়ে ১৫ হাজার করা টাকা হবে। বিভিন্ন উৎসব ভাতা বেড়েছে। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস ভাতা চালু করা হয়েছে। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর দাফন ও সৎকারের টাকা দ্বিগুন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সকল মুক্তিযোদ্ধার কবর একই ডিজাইনে করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরের স্থানগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রত্যোক মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বগাঁথা ১০ বা ২০ মিনিটের বক্তব্য রেকর্ড করে রাখা হবে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতি মুক্তিযোদ্ধাকে ১৫ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে এই টাকা ব্যয় হবে এবং যার নামে টাকা বরাদ্দ হবে তিনি সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী এই টাকা খরচ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, দারিদ্র একটি অভিশাপ, এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে বিগত ১০ বছরে দেশের দারিদ্রের হার ৪০ থেকে ২১ ভাগে নেমে এসেছে। প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের ফলে আগামী ৫ বছর পর দেশে দারিদ্রের হার ৫ ভাগের নিচে নেমে আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেট উত্তম তবে তা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের কাজের গতিশীলতা আনতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এখন সময়ের দাবি। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এদেশে জেলা সরকার গঠন করেছিলেন। এখনও জেলা সরকার সময়ের দাবি। তা হলে কর্মপদ্ধতি আরো বেগবান হবে।
দেশের লোকসংখ্যার অনুপাতে করদাতার সংখ্যা কম উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করদাতার সংখ্যা বাড়াতে প্রস্তাব করেন, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে তারা এনআইডি’র মাধ্যমে কর দাখিল করবেন। আর যাদের টিআইএন আছে তারা টিআইএন’র মাধ্যমে কর দাখিল করবেন। তাহলে করদাতার হার অনেক বাড়বে এবং ঘাটতিও হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য আজ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রীর সফল ও বলিষ্ট নেতৃত্বে জাতিকে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বর্তমানে বিদেশে থাকে, তাদের অবস্থার উন্নয়ন এবং সহযোগিতার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৪ ঘন্টার হটলাইন চালু, অভিযোগ বাক্স স্থাপন, ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদানের জন্য দূতাবাসগুলোতে এ্যাপ্রস চালু, প্রতিটি দূতাবাসে দেশীয় টিভি দেখার ব্যবস্থা করা, দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স গ্রহণ, গণশুনানী গ্রহণ ও প্রবাসীদের হয়রানী বন্ধে বিমানবন্দরে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চমকে দেয়া নানাসব অর্জনে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের অপার বিষ্ময়। প্রস্তাাবিত বাজেট দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য অঞ্চলের দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহারে সফর করেছেন এবং ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেন। সেই চুক্তির কারণে এখন পার্বত্যাঞ্চলে বিজ্ঞানপ্রযুক্তিসহ নানা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের বাজেট এখন হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আগে পার্বত্য এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। বান্দরবান জেলায় আগে একটি মাত্র কলেজ ছিল। অথচ এখন প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ হয়েছে।
দেশের পার্বত্য এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে তিনি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান।
চিফ হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উন্নয়ন দর্শন। এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে যে উন্নয়ন স্বপ্ন আমরা দেখেছি তা বাস্তবায়িত হবে।
যুব ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, যুবকদের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ইতোমধ্যে জাতীয় যুবনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ন্যাশনাল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে লাখ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গতিতে বাংলাদেশ এগিয়েছে। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা ও আন্তরিকতায় ক্রিড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশে টাইগাররা বিশ্বকাপে যেভাবে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেছে আশা করছি বাংলাদেশ টিম ফাইনাল খেলবে।