মধুটিলা ইকোপার্কে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

376

শেরপুর, ১৮ জুন, ২০১৮ (বাসস) : গারো পাহারের পাদদেশে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলায় মধুটিলা ইকোপার্কে এবার ঈদে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। শেরপুর জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য সংলগ্ন মধুটিলা ইকোপার্ক অবস্থিত। পাহাড়ের চূড়ায় ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে উঁচু-নিচু পাহাড়ের গায় মেঘ-রোদ্দুরের খেলা আর সীমান্দের ওপারের ভারতীয় অধিবাসীদের ঘর-বাড়ির দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়, হৃদয়কে উদ্বেলিত করে। সেই সাথে এই গারো পহাড়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা হাজার হাজার নর-নারীর এ যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে এবার ঈদে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনাধীন পোড়াগাঁও ইউনিয়নের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের সমেশ্চূড়া বীটের আওতায় ৩৮০ একর পাহাড়ি টিলার ওপর ‘মধুটিলা ইকো পার্ক’ নামে মনোরম পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়েছে। গারো পাহাড় এলাকায় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক নৈস্বর্গিক এই পিকনিক কেন্দ্রে এখন হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় ভরে উঠেছে। প্রতি বছর শীত মওসুমে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষা সফর ও বনভোজনে বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারে করে হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুরা এ পার্কে বেড়াতে আসছেন।
ময়মনসিংহ বন বিভাগ ১৯৯৯ সন থেকে ইকো পার্কের প্রাথমিক অবকাঠামো ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ দুই পর্যায়ে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শেষ করে ২০০৬-০৭ অর্থ বছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইকো পার্কের যাত্রা শুরু হয়।
ইকোপার্ক সূত্রে জানা গেছে, এই ইকো পার্কে বর্তমানে সুদৃশ্য প্রধান ফটক, ডিসপে¬¬ মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম লেক ও বোটিং, স্টার ব্রীজ, স্ট্রেম্পিং রোড বা সুউচ্চ পাহাড়ে উঠার জন্য ধাপ রাস্তা (সিঁড়ি), মিনি শিশু পার্ক, মহুয়া রেস্ট হাউজ, স্টীলের ছাতা, ইকো ফ্রেন্ডলি বেঞ্চ, আধুনিক পাবলিক টয়লেট, পার্কের প্রবেশ পথ ধরে যাওয়া বিভিন্ন সড়কের পাশে স্থাপন করা হয়েছে হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জীব জন্তুর ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়া আরো রয়েছে বিরল প্রজাতি, পশু পাখি আকৃষ্ট, ওষুধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির গাছের বাগান, মৌসুমী ফুলের বাগান এবং সাত রঙের গোলাপ বাগান। পার্কের উঁচু টিলার উপর ৩ কামরা বিশিষ্ট সুদৃশ্য বাংলো বা ‘মহুয়া রেস্ট হাউজ’। এটি ব্যবহার করতে হলে ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিস থেকে প্রতিদিনের জন্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২০০ টাকা ভ্যাটসহ মোট ৪৭০০ টাকায় ভাড়া নিতে হবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান রিপন জানান, যেভাবে এই পার্কে দর্শনার্থী বা ভ্রমণ পিপাসুদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে সরকারের এই স্পট থেকে বছরে কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে সেজন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তা, পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ ইকো পার্ক থেকে নন্নী হয়ে তিনআনী বাজার মোড় পর্যন্দ প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা প্রসস্থকরণ খুবই জরুরি। এতে দেশের দূর দূরান্তের বিভিন্ন লাক্সারী বাস সহজেই ইকো পার্কে আসতে পারবে।
ভ্রমণকারীরা জানান, যেহেতু সরকার এই পার্ক থেকে বছরে লাখ লাখটাকা আয় করছে, তাই এই পর্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি বরাদ্দের প্রয়োজন।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে শেরপুর জেলা সদরে বেশ কিছু ভাল বাস সার্ভিস রয়েছে। জন প্রতি ভাড়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। এরপর শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ি উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত বাসে জন প্রতি ৩০ টাকায় অথবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় যেতে ভাড়া লাগবে জন প্রতি ৬০ টাকা। এরপর মধুটিলা ইকো পার্ক পর্যন্ত রিকশা বা ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটো রিকশায় যাওয়া যাবে। এতে জন প্রতি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং রিজার্ভ ভাড়া নিবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়া মধুটিলা ইকো পার্ক থেকে ভোর ৬ টায় প্রতিদিন ঢাকা এবং ঢাকা থেকে প্রতিদিন বেলা ২ টায় ইকো পার্ক পর্যন্ত যাতায়াত করছে। আর যারা ঢাকা থেকে নিজস্ব গাড়িতে আসতে চান তারা ময়মনসিংহ পার হয়ে সরাসরি শেরপুরের নকলা উপজেলা থেকে শেরপুর জেলা সদরে না এসে নালিতাবাড়ি উপজেলা হয়ে মধুটিলা যাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন : কেউ যদি বেড়াতে এসে রাত্রি যাপন করতে চান তবে শেরপুর জেলা সদরেই কয়েকটি অভিজাত আবাসিক রয়েছে সেখানে থাকতে হবে। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজের প্রতি কক্ষ এক রাতের জন্য ভাড়া ৫০ টাকা, এলজিইডি’র প্রতি কক্ষ ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং সার্কিট হাউজের প্রতি কক্ষ ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানান, এবার ঈদে শেরপুরে কয়েকটি পর্যটন এলাকায় দর্শনার্থীদেও চলাফেরা নিরাপদ করতে এলাকাগুলোতে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করা হয়েছে।