পঞ্চগড়ে কেঁচোর মাধ্যমে উৎপাদিত জৈবসার জনপ্রিয় হচ্ছে

438

॥ জাকির হোসেন কবির ॥
পঞ্চগড়, ২৭ জুন, ২০১৯ (বাসস) : জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কেঁচো দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভার্মিং কম্পোষ্ট সার । কেঁচো দ্বারা উৎপাদিত সার ওই অঞ্চলের কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মিং কম্পোষ্ট বা কেঁচো সার। এ উপজেলাসহ আশপাশের প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ এখন কেঁচো চাষের মাধ্যমে কম্পোষ্ট সার তৈরিতে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে নিজেদের আয়ের পথ সুগম করে পরিবর্তিত জলবায়ু প্রভাবে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় ভিন্নমাত্রার অবদান রেখে যাচ্ছেন। নিজেদের ফসলে জৈব সার ব্যবহারের পাশাপশি কম্পোষ্ট সার বিক্রি করে তারা জীবন জীবিকায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। ফসল ও মাটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৮টি গুণ বিশিষ্ট পরিবেশবান্ধব কেঁচো সারে একদিকে যেমন কৃষকের উৎপাদন খরচ কমছে,অন্যদিকে তেমনি জমির উর্বরা শক্তি বাড়ছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলার চরতিস্তাপাড়া গ্রামের কৃষিবিদ জিকরুল হক বছর দুয়েক আগে তার নিজ বাড়িতে ১০টি চাড়িতে ১ হাজার কেঁচো দিয়ে জৈব সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। জিকরুল হক বাসসকে জানান, গরুর গোবর সংগ্রহ করে ছায়াযুক্তস্থানে গর্তে পলিথিন বিছিয়ে ১০-১২ দিন রাখতে হয়,পরে তা তুলে ছাঁকুনিতে চেলে মাটির তৈরি চাড়িতে কেঁচো দিয়ে আরো ১৫-২০ দিন চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখলেই ব্যবহার উপযোগী সার হয়ে যায়। এরপর ছাঁকুনিতে চালার মাধ্যমে কেঁচো আলাদা করলেই পুরোপুরি ভার্মিং কম্পেষ্ট তৈরি হয়। এ সার তিনি নিজের ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করেন। পাশাপশি এ পদ্ধতিতে জৈব সার উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে তার ৭৫টি চারিতে ৫ লাখ কেঁচো রয়েছে। প্রতি কেজি ভার্মিং কম্পোষ্ট সার বাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে । কৃষিবিদ জিকরুল জানান, সার বিক্রির পাশাপাশি তার ফার্ম থেকে কেঁচো বিক্রি হচ্ছে । প্রতিটি কেঁচো ১টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একদিকে সার উৎপাদন হচ্ছে,অন্যদিকে কেঁচোর বংশ বৃদ্ধিও বাড়ছে। এতে বাড়তি আয়ের পথও খুঁজে পেয়েছেন জিকরুল।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীম ইকবাল বাসসকে জানান, কৃষি বিভাগ কেঁচোর মাধ্যমে জৈব্য সার তৈরিতে গ্রƒপ ভিত্তিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রায় ১৫টি গ্রুপের মাধ্যমে শতাধিক কৃষক-কৃষাণীদের প্রশিক্ষণ গত দু-মাসে সম্পন্ন করেছেন। কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেবীডুবা গ্রামের রিনা রানী , ঝুমুর, হায়দার আলী , সমষের কেঁচোর মাধ্যমে জৈব্য সার তৈরি শুরু করেছেন। এতে তারা সফলতাও পেয়েছে। তারা তাদের উৎপাদিত জৈব্য সার ফসলে ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগ এ প্রক্রিয়ায় সার তৈরিতে আরও ব্যাপক কৃষকদের মাছে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ভাবছেন বলে কৃষি কর্মকর্তা জানান।
দেবীডুবা গ্রামের রিনা রানী জানান, বাড়িতে কেঁচোর তৈরি জৈব সার দিয়ে দেড়বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলাম।কিন্তু যারা রাসায়নিক সার দিয়ে মরিচ চাষ করেছে তাদের চেয়ে আমার মরিচের ফলন অনেক ভাল হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, বাড়িতেএকটি গরু থাকলে কেঁচোর মাধ্যমে ৪৫দিনে ৬০ কেজি জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব ।একজন নারী যদি ২ হাজার কেঁচো চাষ করে তাহলে সে মাসে ৬০ কেজি জৈব সার উৎপাদন করতে পারবে। এছাড়াও ২ হাজার কেঁচো থেকে বছরে ৮০ হাজার হবে। এতে করে সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি একজন নারী শুধুমাত্র কেঁচো চাষ করেই মাসে অনায়াসে ৪ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন ।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষিঅফিসার বলেন,ভার্মি সার প্রয়োগের ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এতে মাটির উর্বরা শক্তিবৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি এ সার পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক ভ’ুমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। জৈবসারের মাধ্যমে কৃষকরা একদিকে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন অন্যদিকে মাটি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বলে কৃষি অফিসার মনে করেন।