বাজেট বাস্তবায়নে দেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে : সরকারি দল

222

সংসদ ভবন, ২৭ জুন, ২০১৯ (বাসস) : প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, এ বাজেট বাস্তবায়নে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকেল ১০ টা ৩৫ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ,হ.ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনার ৯ম দিনে আজ বেলা ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচাযর্, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সরকারি দলের আ. ফ. ম রুহুল হক, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, নুরুল আমিন, নেসার আহমেদ, মকবুল হোসেন, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, ফরিদা খানম, শবনম জাহান, বেগম নাদিরা ইয়াসমিন ডলি, শামীমা আক্তার খানম ও জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আলোচনায় অংশ নেন। সংসদের বৈঠক আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমাগত বাড়ছে। শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি যথাযথ সুরক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার, রপ্তানীমুখী শিল্পের বহুমুখী প্রসারের প্রচেষ্টা রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্প অর্থনৈতিক সার্ভিস খাতে রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। মূশকমুক্ত টার্নওভারের সীমা ৫০ লাখ টাকা, টার্নওভার করের উর্ধ্বসীমা ৪০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা এবং বিপুল সংখ্যক আইটেম মূশকের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পায়নের ধারা আরো জোরদার হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। ১৯টি অবকাঠমোতে বিনিয়োগ করলে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এগুলো হলো-গভীর সমুদ্রবন্দর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, গ্যাস পাইপলাইন, হাইটেক পার্ক, আইসিটি ভিলেজ, সফটওয়্যার টেকনোলজি জোন, তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক, বড় পানি শোধনাগার, পানি সরবরাহের পাইপলাইন, এলএনজি টার্মিনাল, ট্রান্সমিশন লাইন, মোবাইল ফোনের টাওয়ার ও টাওয়ার শেয়ারিং অবকাঠামো, মনোরেল, র‌্যাপিড ট্রানজিট, নবায়নযোগ্য জ্বালানী, সমুদ্র-নদীবন্দর সড়ক ও সেতু, ভূগর্ভস্থ রেল ও বর্জশোধনাগার। এর পাশাপাশি প্রস্তাবিত বাজেটে অঞ্চলভিত্তিক ২৫টি শিল্পে বিনিয়োগের জন্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে এলাকাভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজিপুর জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলা ছাড়া অন্য জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগে শহরের বাইরে শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তারা ৫ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাবেন। রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে সিটি কর্পোরেশনের বাইরে এবং রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে ১০ বছর মেয়াদী কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিগত ১০ বছরে উপকূলীয় অঞ্চলে ১শ’টি ঘুর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে এবং আরো ২২০টি ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আইলা বিধ্বস্ত এলাকায় ৬ গাজার ৯০টি ঘূর্ণিঝড় সহনীয় গৃহ নির্মাণ করেছে।
তিনি জানান, গৃহহীনদের জন্য ৪শ’ বর্গফুটের দুর্যোগ সহনীয় ১১ হাজার ৬০৪টি গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আগামীতে আরো ৩ লাখ গৃহ নির্মাণ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশকে জাপানের মতো ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্রে পরিনত করার জন্য জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সাথে আলোচনা হয়েছে এবং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানীকৃত গুড়ো দুধের উপর ৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাবকে যথার্থ ও সময়োপযোগী উল্লেখ করে বলেন, আমদানীকৃত গুড়ো দুধে পুষ্টিমান অনেক কম থাকে।
তিনি বলেন, মিল্কভিটার দুধে ফরমালিন ও আর্সেনিক রয়েছে বলে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই অভিযোগ সত্য নয়। মিল্কভিটার দুধে ক্ষতিকর কোন উপাদান নেই, এটা বিএসটিআই পরীক্ষা করেছে। মিল্কভিটার দুধ আমদানীকৃত যেকোন গুড়ো দুধের চেয়ে অনেক ভাল এবং পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সরকারি দলের সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, এই সরকারের স্থায়ীত্ব আরো ১৫ বছর থাকা প্রয়োজন। তাহলে এই দেশ শুধু ডিজিটালই হবে না, একটি সুপার হাইটেক কান্ট্রিতে পরিনত হবে।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি হার আরো ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অন্যতম শক্তিশালী দেশে পরিনত হবে।
বিরোধী দলের সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিএনপি’র সদস্যরা এখানে দাঁড়িয়ে সংসদকে অবৈধ বলছে, যা সংসদ অবমাননার শামিল। এ ব্যাপারে তিনি স্পিকারের রুলিং চেয়ে বলেন, ‘কোন সদস্য যাতে সংসদে দাঁড়িয়ে এই সংসদকে অবৈধ সংসদ বলতে না পারে, এ ব্যাপারে স্পিকারের রুলিং দেয়া উচিত।’