দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা

187

গোপালগঞ্জ, ১৮ জুন, ২০১৮ (বাসস) : অন্ততঃ দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। মুন্সী বংশের এসব গ্রামবাসী ঈদের নামাজ শেষে এক সাথে দল বেঁধে একে অপরের বাড়িতে ঈদের খাবার খেতে যান। সে ধনী বা দরিদ হোক না কেন,্র তারা সবাই খাবার খান কলার পাতায় করে। এভাবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তারা ধরে রেখেছেন বছরের পর বছর।
এ ভাটিয়াপাড়ভ গ্রামের ২/৪ ঘর বাদে সবাই মুন্সী বংশের। তারা পূর্ব পুরুষ থেকে এক সাথে ঈদের নামাজ শেষ করে বিভিন্ন বাড়িতে দল বেঁধে যান। খাবার খান এক সাথে। সে জন্য বসার আলাদা কোন ব্যবস্থা থাকে না। মাটিতে বসে কিংবা হাতে হাতে নিয়ে সেমাই, মিষ্টি, পোলাও, মাংস খাওয়া এক ধরনের আনন্দ তাদের।
ওই গ্রামের মুন্সী তাইমুর ইসলাম, মুন্সী দাউদ আলি, মুন্সী আইয়ুব আলি জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামে রয়েছে তিন শতাধিক পরিবার। সুন্দর পরিপাটি এ গ্রামের বাড়িগুলো বেশ সাজানো গোছানো। রাস্তার পাশেই সব বাড়ি। তারা তাদের পূর্ব-পুরুষের যে রেওয়াজ সেটি ধরে রেখেছেন। ঈদের নামাজ শেষ করে আশপাশের কয়েকটি বাড়ির খাবার এক জায়গা করা হয়। এভাবে গ্রামের কয়েকটি স্থানে খাবার জড়ো করে দলে দলে লোকজন গিয়ে সেসব খাবার খেয়ে আসছেন এবং এ জন্য কোন প্লেট বা চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা থাকে না। কলার পাতায় এবং হাতে করে এসব খাবার খেয়ে নিচ্ছেন আনন্দের সাথে।
এতে একদিকে যেমন গ্রামের সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ একে অপরের প্রতি সহনশীল থাকে এবং থাকে সবার প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা। তারা জানান, গ্রামটিতে তেমন মামলা মোকদ্দমাও হয় না। ছোটখাটো কোন ঘটনা ঘটলে তা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলেন।
তিন প্রজন্মের লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বাপ-দাদার আমল থেকে এমন রেওয়াজ দেখে এসেছেন, আগামীতেও যাতে এ ঐতিহ্য চলমান থাকে তার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এ ঐতিহ্যকে ভাটিয়াপাড়া গ্রামবাসী ধরে রাখায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থা যদি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া যায় তা’হলে মানুষে মানুষে বিভেদ কমে আসবে।