বাসস দেশ-১২ : কাগজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

179

বাসস দেশ-১২
পেপার-আমদানিকারক-প্রেস ব্রিফিং
কাগজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি ব্যবসায়ীদের
ঢাকা, ২২ জুন, ২০১৯ (বাসস) : প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে এই খাতের ছয় ব্যবসায়ী সংগঠন।
শনিবার রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনয়াতনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনীয়াবাত, বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুর রহমান পর্বত, বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান, চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল এবং মেট্রোপলিটন প্রেস ওনার্স এসাসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান উজ্জ্বল।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের মুদ্রণ প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইডিস বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপারের বিপুল চাহিদা থাকলেও এসব পণ্যের আমদানিতে সর্বোচ্চ হারে শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। এর ফলে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে অবৈধ ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব। পাশাপাশি প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তারা বলেন, রপ্তানিকারকদের বন্ড সুবিধা অব্যাহত রেখে বাণিজ্যিকভাবে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বিদেশী কাগজ আমদানি করার সুযোগ দিলে বন্ডের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হবে ও বাজার স্থিতিশীল হবে। সরকারি রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে এদেশের মুদ্রণ শিল্প হবে আরো বিকশিত।
সংগঠনগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনীয়াবাত বলেন, বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো-আমদানি হওয়া কাগজ পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে, সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বন্ড সুবিধায় আমদানি হওয়া কাগজ পণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে অবৈধ ব্যবসায়িরা লাভবান হয়। সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদার ভিত্তিতে শুধুমাত্র ৩০০ গ্রাম ও তদুর্ধ্ব গ্রামের কাগজ ও বোর্ড বন্ড সুবিধায় আমদানি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বন্ড সুবিধা ভোগকারী কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারি এই নীতিমালাও লংঘন করে নির্বিচারে বিভিন্ন গ্রামের কাগজ ও বোর্ড আমদানি করছে। বন্ড সুবিধার আওতায় শূন্য শুল্কে আমদানি করা ৩০০ গ্রামের চেয়ে কম ওজনের এ সকল কাগজ ও বোর্ড (যেমন- ডুপ্লেক্স বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড ইত্যাদি) খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, উচ্চ হারে শুল্ক থাকায় এ শিল্পের ব্যবসায়ীরা অব্যাহতভাবে লোকসানের মুখে রয়েছে। কাঁচামাল হিসেবে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইডিস বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপারের বিপুল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এই পণ্যগুলো দেশে উৎপাদন হয় না। কিছু কাগজের মিল কারখানা রয়েছে, যারা শুধু কাঁচামাল হিসাবে সেগুলোতে শুধুমাত্র ছাপা ও লেখার কাগজ, নিউজ প্রিন্ট, মিডিয়া ও লাইনার পেপার, সিগারেট পেপার, টিস্যূ পেপার ও নিন্মমানের বোর্ড উৎপাদন করে। এর প্রেক্ষিতে অন্যান্য দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যে হার বিদ্যমান আছে মুদ্রণ শিল্পেও সেই হারে শুল্ক আরোপ করে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, বন্ডের অবৈধ কাগজ ছাপাখানায় যাক, এটা আমরা চাই না। আমরা বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ চাই। খোলাবাজারে কাগজ বিক্রি বন্ধ করে ব্যবসায় ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চাই। তার দাবি- রপ্তানিখাতে কাগজের ৯ শতাংশ প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং হিসেবে রপ্তানি হয়।
শহীদ সেরনীয়াবাত বলেন, ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের কারণে মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল আমদানিতে চূড়ান্তভাবে কর আপাতন হয় ৬০.৭৩ শতাংশ। ফলে, যারা শুন্য শুল্কে বন্ড সুবিধার আওতায় একই ধরনের পণ্য আমদানি করে ২০-৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। এতে ব্যবসায়ীরা অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কালে দেশে উৎপাদিত কিছু কাগজ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী রপ্তানিকৃত কাগজের মূল্য ৭০ হাজার টাকা প্রতি টন। অথচ এর চাইতে নি¤œমানের কাগজও দেশীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৯০-৯৫ হাজার টাকা প্রতি টন। পেপার মিলগুলো যে হারে ট্যারিফ মূল্যের ওপর ভ্যাট, ট্যাক্স প্রদান করছে আর যে দামে উৎপাদিত কাগজ বিক্রি করছে তার ব্যবধান অনেক বেশি।
ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ঢাকা কাস্টমস বন্ড ওয়্যারহাউস আটক করা মোট পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, সেলফ কপি পেপার, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার, পেপার বোর্ড ইত্যাদি। পরিসংখ্যান হতে এটা সুস্পষ্ট যে-বন্ড সুবিধায় আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের পেপার ও বোর্ড আমদানি খাতে সরকার প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাসস/এএসজি/আরআই/১৭৩৭/আরজি