বাজেট উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথকে আরো এগিয়ে নিবে : সরকারি দল

473

সংসদ ভবন, ২০ জুন, ২০১৯ (বাসস) : প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের এবং ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকেল ৩টা ০৯ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ,হ.ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনার ৩য় দিনে আজ গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী স ম রেজাউল করিম, সাধন চন্দ্র মজুমদার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সরকারি দলের বেগম মতিয়া চৌধুরী, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, মীর মোশতাক আহমেদ রবি, আনোয়ারুল আবেদীন খান, আবদুস সোবহান মিয়া, বেনজীর আহমেদ, শহীদুল ইসলাম বকুল, এনামুল হক, বেগম মেহের আফরোজ, বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান, অপরাজিতা হক, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বেগম সালমা ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদসা, গণফোরামের মোকাব্বির খান, অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অভিষ্ট লক্ষ্যই হচ্ছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ দারিদ্রমুক্ত শান্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য যে অবিরাম সংগ্রাম শেখ হাসিনা শুরু করেছেন তার সূচনা অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এর সূচনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালেই শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়া, সোনার মানুষ তৈরি করা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা কাটিয়ে সামনে অগ্রসর হতে শুরু করেছে, যখন জাতীয় উৎপাদনের হার সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছে, ঠিক তখনই সমৃদ্ধ ও শান্তির বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পরিবারসহ ঘাতকের হাতে শহীদ হন। ভাগ্যজোরে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান। আজ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এসে পড়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকান্ডের সুবিধাভোগী ছিলেন জিয়াউর রহমান। যিনি সেনা প্রধান হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি প্রতিরাত ১২টা থেকে ঢাকা শহরে কারফিউ দিয়ে এক দু:সহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন এবং সভার নামে বঙ্গভবনে দেশের মান্যগণ্য ব্যক্তিদের গভীর রাত পর্যন্ত বন্দি করে রাখতেন। তিনি বলেছিলেন, আই ম্যাক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ান। হিজবুল বাহার নামে তরুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য প্রমোদ বিহারের ব্যবস্থা করেন। এক হাতে তিনি সংবিধানে বিসমিল্লাহ লিখে অপর হাতে ৩৬০টি মদের লাইসেন্স দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মনোনিবেশ করেন। ২০০৫-০৬ সালে দেশের আমদানি ছিল ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭-১৮ তে ৫৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, রপ্তানী ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, আর এখন ৩৭ বিলিয়ন ডলার, প্রবাসী আয় ছিল ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, এখন ১৫ বিলিয়ন ডলার, রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, এখন ৩৩ বিলিয়ন ডলার, বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২৬ শতাংশ, এখন ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, বেসরকারি বিনিয়োগ ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তখন, এখন ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, মেডিকেল কলেজ ছিল ৪৬টি এখন ১১০টি, গড় আয়ু ছিল ৬৫ বছর, এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর, শিক্ষার হার ছিল ৫৩ দশমিক ৭, এখন ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। এখন শতভাগ শিশু বিদ্যালয়ে যায়। জেন্ডার বৈষম্য হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে আরোপিত ১০ শতাংশ উৎসে কর বাদ দেয়ার দাবি জানান।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দেশে মোট চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৫৬ লাখ মেট্রিক টন এবং চাহিদা ২ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া গমসহ অন্যান্য খাদ্য শস্যে আমাদের খাদ্যাভ্যাস রয়েছে। বিএনপি সরকারের সময় কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষকদের হাহাকার করতে হয়েছে। আগে ফসল উৎপাদন কম ছিল। সারের জন্য ১৮ জন কৃষককে গুলিতে মরতে হয়েছে। ডিজেলের অভাবে মানুষের সেচযন্ত্র চালাতে বেগ পেতে হতো। সারাদেশে মঙ্গা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে ভর্তুকী দিয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানী করে, সার, ডিজেল, বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে এবং অধিক ফলনশীল বীজ সরবরাহ করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিনত হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চত করতে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের সকল নাগরিকের জন্য গৃহসংস্থান করতে সরকার কাজ করছে। এদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকার প্রতি জেলায় আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন। ইতোমধ্যে অনেক জেলায় তা সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, বিচারকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারিদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এবং সংসদ ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সকল দিক পর্যালোচনা করলে এটি একটি অনন্য, অসাধারণ, বাস্তবায়নযোগ্য যুগোপযোগী ও সময়োপযোগী বাজেট। এটি একটি প্রায়োগিক বাজেট।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপে বিমানবন্দরে কাজে গতি এসেছে, সেবার মান উন্নত হয়েছে। লাগেজ সর্বোচ্চ কম সময়ের মধ্যে যাত্রীদের হাতে চলে আসে। বিমানবন্দরে কোন ধরনের মালামাল হারিয়ে যাওয়া চিন্তার অতীত। সরকারের উদ্যোগের ফলে বিমানে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। রাজস্ব বেড়েছে ১৪৩ কোটি টাকা। এপ্রিল মাসে অতিরিক্ত রাজস্ব এসেছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে ১২ হাজার ফিটে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।