বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : নতুন প্রকল্প গ্রহণকালে জলাধার ও বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

183

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-পরিবেশ দিবস-ভাষণ
নতুন প্রকল্প গ্রহণকালে জলাধার ও বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

সুন্দরবন রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ বনে বেশি বাঘ থাকলে অনেকে ভেতরে গিয়ে বনের ক্ষতি করার সাহস পায় না।
তিনি বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষায় নদীর লবণাক্ততা দূর করতে হবে। লবণাক্ততা দূর হলে হোগলা বন বেড়ে যায়। আর হোগলা বন বাড়লে বাঘের ব্রিডিং পয়েন্ট বাড়ে। সেইসাথে নদীর নাব্যতা বাড়ানোরও কাজ করা হচ্ছে।
সরকার প্রধান এসময় বলেন, মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হলেও ধ্বংস হয়ে গেছে পাহাড়ি বনাঞ্চল।
এ সময় উখিয়া’র প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অতীতকে স্মরণ করে বর্তমানের সঙ্গে এর বিস্তর ব্যবধানের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিবেশ দূষণে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেরা আর ক’দিন থাকবো। কিন্তু আমাদের বংশধররা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, টিকে থাকতে পারে, সেজন্য শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমরা একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে যাচ্ছি এর প্রতিটি জায়গাতেই জলাধার থাকবে এবং বৃক্ষরোপণ করা হবে। এমনকি আমরা যথন হাউজিং প্ল্যান করছি সেখানেও জলাধারের ব্যবস্থা রাখছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে এজন্য আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করছি যাতে করে আমাদের পরিবেশটা সুরক্ষিত থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে, আমরা আরও আধুনিক হচ্ছি। এর সঙ্গে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। আমরা যত বেশি যন্ত্রের ব্যবহার করছি তত বেশি পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। রান্নার ধোঁয়া, ডিটারজেন্ট, সাবান, শ্যাম্পু, মনুষ্য বর্জ্য, ইটভাটা, বিভিন্ন কেমিক্যাল পরিবেশ দূষণ করছে।
এসবের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সবাইকে গাছ লাগানোর পাশাপাশি তিনি গবেষকদের এই সব মনুষ্য সৃষ্ট দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মোট ভূমির ২০ ভাগ বনায়ন করতে হবে। এছাড়া যে বনগুলো আছে তা রক্ষা করতে হবে। নদী ড্রেজিং, নদী প্রবাহমান রাখতে হবে। বিভিন্ন দ্বীপে প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ সরকার পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রতি বছর ১ আষাঢ় কৃষক লীগের উদ্যোগে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের প্রসঙ্গও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার ১৯৭৩ সালে ‘পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’ গ্রহণ করার মাধ্যমে এদেশে পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করে। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে পরিবেশ সংক্রান্ত কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকান্ডের ফলে প্রতিনিয়ত বায়ু দূষিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর তথ্য অনুযায়ী উন্মুক্ত স্থানের বায়ু দূষণের ফলে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪২ লাখ মানুষ মারা যায়। বিশেষ করে রান্নার এবং জ¦ালানির ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণের ফলে আরও প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ মারা যায়।
এ সময় তাঁর সরকারের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার ইট নির্মাণ শিল্পকে পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ প্রণয়ন করে। এটি ২০১৮ সালে আবারও সংশোধিত আকারে পাশ করা হয়।
তিনি বলেন, দেশে বিদ্যমান প্রায় তিন-চতুর্থাংশ (৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ) ইটভাটায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশসম্মত এবং জ¦ালানি-সাশ্রয়ী ইটভাটায় রূপান্তর করা হয়েছে।
যানবাহনের কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকাসহ সকল বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাসমূহ সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্র্কৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে সারাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলতে সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী সৃজন এবং বনভূমির ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুত করা হচ্ছে। সুন্দরবনসহ মোট ১৫টি সংরক্ষিত এলাকার ২০০৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত কার্বন জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁঁকি মোকাবেলায় তাঁর সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় লাগসই প্রকল্প গ্রহণের জন্য কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান-সিআইপি ২০১৬-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে সরকারের দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম কৌশল সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সাফল্যও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বনের পাশে এবং প্রান্তিক ভূমিতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক বন সৃষ্টি করা হচ্ছে। যেখানে সরকারি জমিতে বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যাকারী ব্যক্তি বা সংগঠনকে বনজ সম্পদ থেকে আহরিত লভ্যাংশের ৭৫ ভাগ দেয়া হয়। বাকি ২৫ ভাগ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয়।
তিনি বলেন, সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সৃজিত বাগানে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬০১ জন উপকারভোগী সম্পৃক্ত রয়েছেন। যাদের মধ্যে মহিলা উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৭ জন। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৪ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৩৫৬ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার উপকারভোগীদের মাধ্যমে পুনঃবনায়নের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ তহবিল গঠন করেছে। ফলে অবক্ষয়িত বনভূমি সংরক্ষণ ও জবরদখলকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবেলায় বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি এন্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি) প্রণয়ন করেছে এবং নিজস্ব উদ্যোগে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাষ্ট ফান্ড গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডে ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ইনটেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন (আইএনডিসি) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ এবং শিল্প খাতে কৌশলপত্রসহ ন্যাশনালিটি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন ইমপ্লিমেন্টেশন রোডম্যাপ (এনডিসি) প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিবেশ সংরক্ষণ ও ওজন স্তর সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সার্টিফিকেট অব এপ্রিসিয়েশন অর্জন এবং বাংলাদেশ সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (সাসেপ)-এর নির্বাহী বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক অভিঘাত মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে জাতিসংঘ তাঁকে লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করারকথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৫০০/এমএসআই