বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : এসএসএফ’কে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

166

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-এসএসএফ-ভাষণ
এসএসএফ’কে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এবং নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এসএসএফ সদস্যদের কর্তব্য নিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাতে ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯ বার ক্যু হয়েছে, নানা ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের উত্থান ঘটেছে। বার বার নানা প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব চক্রান্ত মোকাবেলা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের নিরাপত্তা দেয়া- এটা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ।’
‘তবে, আমি এটুকু বলবো যে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এসএসএফ সবসময়ই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই বাহিনীর সকল সদস্যদের অত্যন্ত দৃঢ় মনোবল দেখেছি এবং তাদের আনুগত্য এবং উচ্চমানের পেশাদারিত্ব আমাকে সত্যিই গর্বিত করেছে।’
বিদেশ থেকে আগত অতিথিরাও এসএসএফ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এসএসএফ’র সদস্যরা তাঁদের দক্ষ পেশাদারিত্বের মাধ্যমে সবসময় দেশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রেখেছেন।’
ভিআইপিদের নিরাপত্তাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গে নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখায় তিনি এসএসএফ সদস্যদের এ সময় আন্তরিক ধন্যবাদ ও জানান।
নিজেকে নিয়ে নয় বরং তাঁর আশেপাশে যারা নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন তাঁদেরকে নিয়েই তাঁর সবসময় চিন্তা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সকলের উন্নতি-সমৃদ্ধি এবং নিরাপদ জীবন কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘কতক্ষণ আছি জানি না। তবে, যে সময়টুকু পাব আমি দেশের জন্য কাজ করে যাব। নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তা করি না কারণ, আমার ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবে। তোমাদের জন্যই (যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত) আমার চিন্তা, আল্লাহ তোমাদের হেফাজত করুন।’
তিনি এসএসএফ সদস্যদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কল্যাণ কামনা করে বলেন, ‘আমি চাই এই বাহিনীটা একটা আদর্শ নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে যেভাবে গড়ে উঠছে সেভাবে এটা গড়ে উঠে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে।’
দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান না হলে দেশের উন্নতি করা সম্ভব নয়। যদিও অনেক ঝড়-ঝাপটা এসেছে সেগুলোকে মোকাবেলা করেই দেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির হার ৮ ভাগে উন্নীত করেছি, যা একসময় কেউ চিন্তাও করতে পারতো না।’
অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে আজকে বাংলাদেশের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের কর্ম পরিধিও বেড়েছে। কারণ, এবারে আমরা ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল তা এক দশকের মধ্যেই ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায় তুলে আনা এবং সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে, দেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকাতেই এটা সম্ভবপর হয়েছে।’
দেশের জনগণ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেছে বলেই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে এবং সততার সঙ্গে যদি কাজ করা যায় তাহলে একটা দেশকে যে উন্নত করা যায় সেটা আমরা হত এক দশকে প্রমাণ করেছি।’
অবশ্য জাতির জীবনে ’৭৫ এর কালো রাত না এলে বাংলাদেশ আরো আগেই এই সক্ষমতা অর্জনে সমর্থ হত বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কোনভাবেই ব্যর্থ না হয়, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের ইতিহাস কেউ যেন ভুলে না যায়।’
তিনি বলেন, ‘দেশকে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং আন্তর্জাতিক ভাবেও দেশের ভাবমূর্তি যেন বৃদ্ধি পায়-সে বিষয়েও সকলকে সচেতন থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় সফরের সময় সৌদি আরবে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইসলামের ভাতৃত্ববোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল মুসলিম দেশগুলোকে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার আহবান জানানোর বিষয়টিও তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই এবং আল্লাহ তায়ালাই শেষ বিচারের মালিক, কে ভাল মুসলমান কে ভাল নয়, সেটা নির্ণয়ের দায়িত্ব তিনি কাউকে দেন নাই। তাহলে আজকে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে কেন এত সংঘাত, খুনোখুনি, রক্তারক্তি। কেন সমস্যাগুলি নিজেরা বসে আমরা সমাধান করতে পারি না।’
মুসলমানদের এই রক্তপাতে লাভবান হচ্ছে কেবল অস্ত্র ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করে তিনি এই সংঘাত বন্ধে ওআইসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি এই কথা বলে আমি আমার জীবনকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছি। এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া কাউকে ভয় করি না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না, আমার বাবাও যেটা করেন নি।’
জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, অনুসরণ করেই তিনি সরকার পরিচালনা করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সকলকে নিয়ে একটা শত্রুই নির্দিষ্ট করতে চাই, সেটা হচ্ছে দারিদ্র। যেটা সমগ্র বিশ্বের একটি কমন এনিমি।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৮৩৫/-আরজি