সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিজিবি-বিএসএফ ঐকমত্য

467

ঢাকা, ১৫ জুন, ২০১৯ (বাসস) : সীমান্তে নিহতের ঘটনা ও মাদক চোরাচালান শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ঐকমত্য পোষণ করেছে।
রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি’র সদর দফতরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ৪৮তম সীমান্ত সম্মেলনে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী প্রধান একমত হয়েছেন।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।
অন্যদিকে বিএসএফ-এর মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্রর নেতৃত্বে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার বিজিবি সদর দফতরে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সীমান্ত হত্যাকান্ড কিছুটা বেশি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কেন সীমান্ত হত্যাকান্ড ঘটছে, তাও খুঁজে বের করতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য দু’দেশের সীমান্ত বাহিনীর যৌথ টহলের ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকায় বিজিবি ও বিএসএফ-এর মহাপরিচালক পর্যায়ে ৪৮তম সীমান্ত সম্মেলন ১২ জুন শুরু হয়। আজ যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়েছে।
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘মানুষের জীবন রক্ষা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সীমান্ত এলাকায় এই হত্যাকান্ড কারও কাম্য নয়। বিএসএফ প্রথমেই আগ্নেয়াস্ত্র যাতে ব্যবহারের না করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু কখনও কখনও অবস্থা এমন হয়, চোরাকারবারীরা লাঠি, পাথর, ধারালো অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত রক্ষাকারীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। তখনও সীমান্ত রক্ষাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না। আমরা সীমান্তে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করি। কিন্তু সীমান্ত রক্ষাকারীদের ওপর হামলা হলে অনাকাক্সিক্ষত এই ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা হয়।’
বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘গত বছর সীমান্তে মাত্র সাতটি হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এরমধ্যে একটি বাংলাদেশের বাকি ছয়টি ভারতের। তবে এবছর প্রথম পাঁচ মাসে এর থেকে বেশি ঘটনা ঘটে।’
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন উগ্রবাদীদের কার্যক্রম মোকাবিলায় দু’দেশ কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে বিএসএফ মহাপরিচালক রজনীকান্ত বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস ধরে আমাদের মধ্যে খুব বেশি তথ্যের আদান-প্রদান হচ্ছে। আমরা কোনও তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি বিজিবিকে জানাই। বিজিবি কোনও তথ্য পেলে আমাদের জানায়। এ তথ্য অনুযায়ী সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনাও করা হয়।’
“ভারতের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল-মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’ এর সদস্যরা আশ্রয় নিয়ে সংগঠিত হয়। এরপর বাংলাদেশে হামলা চালায়”Ñ এবিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। উগ্রবাদ উভয় রাষ্ট্রের জন্যই সমস্যা। সম্মেলনে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে। এর উৎস কোথায় জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, ভারতে এর কোন উৎস নেই। বাংলাদেশ ও ভারত কোনও দেশ এর জন্য দায়ী নয়। ইয়াবার জন্য তৃতীয় একটি দেশ দায়ী। ভারতেও এর আসক্তি রয়েছে।
ফেলানী হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতে ট্রায়াল চলছে।’
বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বাহিনীর মধ্যে যাতে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধ থাকে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিএসএফ দিল্লি থেকে একটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা শুরু করবে সেটি আমাদের ঢাকায় বিজিবি সদর দফতরে এসে শেষ হবে।’ বিজিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটা বিএসএফ করবে বলে জানান তিনি।
বিচ্ছিন্নতাবাদী ও উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম ও আস্তানা বন্ধে বিজিবি ও বিএসএফ একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার বিষয়টিও সম্মেলনে আলোচনায় হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফ এর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বজায় রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
মানব পাচার ও অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
বিএসএফ মহাপরিচালক সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজিবি ও বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
বিজিবি মহাপরিচালক জানান, বাংলাদেশ কখনও তার ভূমি কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা অন্য কোন রাষ্ট্রের শত্রু পক্ষকে ব্যবহারের সুযোগ দেয় না। তিনি এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। এ প্রেক্ষিতে বিজিবি মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
উভয় পক্ষ সীমান্তে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য, মাদক, স্বর্ণ এবং জালমুদ্রা পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। চোরাচালান দ্রব্যসহ আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও প্রতিবেদন প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিময়ের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষ পর্যায়ক্রমে সীমান্তে নতুন ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করে কুমিল্লা এলাকায় ২য় ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
উভয় পক্ষ সীমান্ত এলাকার অপরাধী অথবা চোরাচালানীদের তালিকা পরস্পরকে হস্থান্তর করেছে এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে পরস্পরের সহায়তা চেয়েছে।