বাজেট ব্যবসাবান্ধব ও বাস্তবায়নযোগ্য

310

ঢাকা, ১৪ জুন, ২০১৯ (বাসস) : ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে সময়পোযোগী, ব্যবসাবান্ধব ও বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা। তবে তারা বাজেট বাস্তবায়নে যেসব চ্যালেঞ্চ রয়েছে তা মোকাবেলায় বছরের শুরু থেকেই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন যা গত অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৮ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বাসসকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট গণমূখী,ব্যবসাবান্ধব ও উদ্ভাবনবান্ধব। যষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় এই বাজেট প্রনয়ন করা হয়েছে। তিনি বাজেটকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অভিযাত্রার পথনকশা বলে মন্তব্য করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণাকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দেবে। তবে সর্বনিন্ম ভ্যাট হার ৫ শতাংশ করায় এর সমালোচনা করেন তিনি।
ফজলে ফাহিম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম সর্বনিন্ম ভ্যাট হার হবে ২ শতাংশ। কিন্তু সেটা করা হয়নি। এতে ভ্যাটের চাপ বাড়বে। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে গিয়ে ব্যবসা কার্যক্রমে যেন কোন জটিলতার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সরকারকে বাড়তি নজর রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ প্রস্তাবিত বাজেটকে গনমূখী ও অর্জনযোগ্য অভিহিত করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় অজর্নের ক্ষেত্রে সবসময় চ্যালেঞ্চ থাকে,তাই বছরের শুরু থেকেই যদি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এই চ্যালেঞ্চ মোকাবেলা করা সম্ভব।
তিনি বলেন,এবারের বাজেটে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্চক বিষয় হলো-আওয়ামীলীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের বড় বড় অঙ্গীকারগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগানোর জন্য ঋণ তহবিল গঠন এবং আমার গ্রাম, আমার শহর এই অঙ্গীকার অর্থ্যাৎ গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার যে অঙ্গীকার ছিল সেটা বাস্তবায়নের জন্য অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
খলীকুজ্জমান বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোয় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বিশেষ করে নদী ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আলাদা বরাদ্দের প্রশংসা করেন। তবে তিনি ব্যাংকিং খাতকে আরো সুশৃঙ্খল করতে এবং এ খাতে সুশাসন জোরদারে বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা থাকার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি(ডিসিসিআই)’র সভাপতি ওসামা তাসীর মনে করেন প্রস্তাবিত বাজেট দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি ও বেসরকারিখাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির নিরলস চেষ্টা করছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে যুগোপযোগি বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে মন্তব্য করে ডিসিসিআই সভাপতি অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)’র সহসভাপতি গোলাম মাইনুদ্দিন বাসসকে বলেন, ব্যবসা সহজীকরণ ও বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বিনিয়োগকারীদের এবং রফতানিকারকদের জন্য সরকার এই বাজেটে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ (ওয়ান স্টপ সার্ভিস,ব্যবসা সহজীকরণ সূচক, অর্থনৈতিক অঞ্চল) গ্রহণ করেছেন। এসব পদক্ষেপের সুফল তখনই পাওয়া যাবে যদি সেগুলো যথাসময়ে ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়। তিনি করজাল সম্প্রসারণের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।
গোলাম মাইনুদ্দিন মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গিয়ে নিয়মিত করদাতাদের ওপর যেন বাড়তি চাপ তৈরি না হয়, সেদিক খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি ও জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি মো. আব্দুল হান্নান প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশে যে বাজেট দেয়া হয়েছে, তা কোনভাবেই উচ্চাভিলাষী নয়, বরং একেবারে বাস্তবসম্মসত। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
তিনি উপজেলা পর্যায়ে কর অফিস সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আয় বাড়ানোর কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ,রফতানি সম্প্রসারণে প্রণোদনা বাড়ানো এবং বৈধ পথে প্রবাস আয় বাড়াতে রেমিটেন্সের ওপর প্রণোদনা দেয়ার পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।