অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪১ রানে হারলো ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান

290

টনটন, ১২ জুন, ২০১৯ (বাসস) : শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতেই হলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানকে। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের ১৭তম ম্যাচে আজ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪১ রানে পরাজিত হয়েছে উপমহাদেশের দল পাকিস্তান। আগের ম্যাচে ভারতের কাছে পরাজিত হওয়ার পরই আবারো জয়ের ধারায় ফিরল অসিরা। চার খেলায় খেলায় তিন জয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের দ্বিতীয় পরাজয়।
জয়ের জন্য ৩০৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তিন বল মোকাবেলায় রানের খাতা খেলার আগেই প্যাট কামিন্সর শিকার হন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান ওপেনার ফখর জামান। এরপর দলীয় ৫৬ ও ব্যক্তিগত ৫৩ রানে আরেক ওপেনার ইমাম উল হক কামিন্সের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া পাকিস্তানকে খেলায় ফেরান অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ ও বাবর আজম।
হাফিজ ৪৯ বলে ৪৬ রান করে ফিঞ্চের শিকার হলে ১৪৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান। তবে পাঁচ নম্বরে নামা অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ এক প্রান্তে অবিচল থেকে শেষ পর্যন্ত ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন। শোয়েব মালিক ও আসিফ আলী ব্যর্থ হলে শেষ দিকে সরফরাজকে যথার্থ সঙ্গ দেন ১৫ বলে ৩২ রান করা হাসান আলী ও ‘ব্যাটসম্যান’ বনে যাওয়া ওয়াহাব রিয়াজ। হাসান তিনটি করে চার ছক্কা হাকিয়ে রিচার্ডসনের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন। মূলত তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় পাকিস্তানান। তারপরও শেষ দিকে ওয়াহাব রিয়াজের ৪৫ রান দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখে। কিন্তু দুই বাউন্ডারি ও তিন ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে স্টার্কের শিকার হয়ে রিয়াজ ফিরে গেলে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে পড়ে দল। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আমির রানের খাতা খোলার আগেই স্টার্কের শিকার হলে ৪৪.৪ ওভারে ২৬৬ রানে থামে পাকিস্তান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কামিন্স দুইটি এবং স্টার্ক ও রিচার্ডসন দুইটি করে উইকেট নেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে মোহাম্মদ আমিরের ক্যারিয়ার সেরা ৩০ রানে পাঁচ উইকেট শিকারে বিশ্বকাপে আজ বুধবার টনটনে ৩০৭ রানে গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া।
বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারীতে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করে ১০৭ রানে আউট হন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ডেভিড ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার ও অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চের (৮২) প্রথম উইকেট জুটিতে ১৪৬ রান করার পর অস্ট্রেলিয়া অনেক বড় সংগ্রহের পথে হাটছিল। এবারের বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত যে কোন উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন তারা।
তবে স্পট ফিক্সিং করে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ফেরা মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেন বাঁহাতি আমির।
ইতোপূর্বে এক দিনের ক্রিকেটে তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল কলম্বোতে ২০০৯ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২৮ রানে চার উইকেট। তবে সেটাকে পিছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি।
শেষ দিকে মিচেল স্টার্ককে আউট করে এক ওভার বাকি থাকতেই ইনিংস শেষ করেন আমির।
নিষেধাজ্ঞা শেষে ফেরা ওয়ার্নার ও স্মিথ উভয়েই আগের ম্যাচগুলোতে দর্শকদের কাছ থেকে দুয়োধ্বনি শুনেছেন। তবে আগের দিন ম্যাচ পুর্ব সংবাদ সম্মেলনে নিজ দলের সমর্থকদের এমন আচরণ না করতে নিষেধ করেছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। অধিনায়কের আহবানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান সমর্থকরা বরং ‘আমির’ ‘আমির’ বলেই গলা ফাটিয়েছে।
কাউন্টি ক্লাব সমারসেটের হোম গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিক ম্যাচে সকালে বৃষ্টি হওয়া পিচে সরফরাজ টস জেতার পর শুরু থেকেই সবার নজর ছিল আমিরের ওপর।
বল হাতে প্রথম স্পেলে চার ওভারে আমির মাত্র ১১ রান দেন আমির। তবে শুরুটা করেন মেডেন ওভার দিয়ে।
ওয়াহাব রিয়াজের বলে ফার্স্ট স্লিপে আসিফ আলি ক্যাচ মিস না করলে ব্যক্তিগত ২৬ রানেই বিদায় ঘটতো ফিঞ্চের।
এরপর মোহাম্মদ হাফিজের বল উইকেটরক্ষক সরফরাজ মিস করায় ব্যক্তিগত ৪৪ রানে দ্বিতীয়বার জীবন পান ফিঞ্চ। এরপরই অফ স্পিনার হাফিজকে পরপর দুই বাউন্ডারি মেরে ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন অসি অধিনায়ক। পরের দুই বলে দুটি ছক্কা হাকান তিনি।
কিন্তু পরক্ষণেই আমিরের প্রথম শিকার হন ফিঞ্চ।
টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত যে কোন উইকেট জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ১৪২ রানের জুটিকে ছাড়িয়ে যান ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার।
শাহিন আফ্রিদিকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের ১৫তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূরণ করেন ওয়ার্নার।
একটি ছক্কাসহ ১০২ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
তবে সেঞ্চুরির পরই শাহিন আফ্রিদির বলে ইমাম উল হকের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন চলতি বিশ্বকাপে চার ইনিংসে তিন হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ওয়ার্নার।
১০ রান করা স্মিথ হাফিজের বলে আউট হলেও ফ্রন্টলাইন ব্যাটসম্যান শন মার্শ, উসমান খাজা এবং এ্যালেক্স ক্যারি সবাই শিকার হন আমিরের।