কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের সুপারিশ সিপিডির

242

ঢাকা, ১১ জুন, ২০১৯ (বাসস) : ধানের আশানুরূপ দাম না পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি প্রদানের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডধারী ১ কোটি ৮০ লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাবে এই টাকা সহজে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।এতে সরকারের ব্যয় হবে ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অর্থনৈতিক পর্যালোচনা এবং আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি এই সুপারিশ করে।
সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্ষ বলেন,কোন কোন রফতানি খাত ঢালাওভাবে ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দাবি করছে। এটা দিলে সরকারের বাড়তি ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। ফলে রফতানি খাতে মোট ভর্তুকি দাঁড়াবে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। তিনি বলেন,‘কৃষক অব্যশই একটা আর্থিক ভর্তুকি দাবি করতে পারে। আমি কৃষককে ৯ হাজার কোটি টাকা দিতে কোনো সমস্যা দেখি না। অর্থনীতিতে তা যুক্তিযুক্ত ও সাম্যবাদী আচরণ হবে।’
সিপিডির অর্থনৈতিক পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান।
এই পর্যালোচনায় তিনি এবারের ধানের দাম নিয়ে আলোচনা করেন। তৌফিকুল ইসলাম বলেন,বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে। তিনি বলেন, হঠাৎ কৃষি খাতে মজুরিও বেড়ে গেছে। এটা সামাল দিতে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রদেয় ভর্তুকির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্ষ বলেন,ব্যাংকিং খাত এবং বিজেএমসিসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কল-কারখানায় প্রতিবছর যে ভর্তুকি দিতে হয়, তা কৃষককে প্রদেয় ভর্তুকির তুলনায় বেশি। তিনি অব্যাহতভাবে ভর্তুকি দিয়ে বিজেএমসির কাল-কারখানা চালানোর প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন।
খেলাপি ঋণ হ্রাস এবং ব্যাংকিংখাতকে আরো সুশৃঙ্খল করতে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহনের সুপারিশ করেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন,সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ব্যাংকিং কমিশন গঠন ও সুদের হার বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
টাকার মূল্যবান নামিয়ে আনা বা টাকার অবমূল্যায়নের সুপারিশ করে দেবপ্রিয় বলেন,‘সরকার যেটা করছে-ডলার বিক্রি করে টাকাকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। টাকাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখার যৌক্তিকতা নেই। প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে চালু রাখতে হলে টাকাকে এখন নিচে নামিয়ে নিয়ে আনতে হবে। এটা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, সরকার যেটা মনে করছে টাকা সস্তা করলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর একটা প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি মূল্যস্ফীতি এখন যে অবস্থানে আছে, তাতে এ হার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে। সে কারণে টাকাকে কিছুটা অবমূল্যায়ন করলে তা সহ্য করার শক্তি অর্থনীতির আছে। কিন্তু অন্য সময় মূল্যস্ফীতি যদি বেড়ে যায়,তাহলে এটা করা জটিল হয়ে পড়বে। তাই এখন টাকার মান পুনঃনির্ধারণ অব্যশই প্রয়োজন।
রাজস্ব আয়ের ঘাটতি সামষ্টিক অর্থনীতির বড় দূর্বলতা উল্লেখ করে সিপিডি রাজস্ব আহরণের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহনের সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে সংস্থাটি সরকারি ব্যয়ের অবচয় রোধ, সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় এবং সামাজিকখাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সংলাপ পরিচালক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফসহ গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।