বাজিস-১ : নাটোরে দেড় সহস্রাধিক আশ্রয়হীন আশ্রয় পেয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে

302

বাজিস-১
নাটোর-আশ্রয়
নাটোরে দেড় সহস্রাধিক আশ্রয়হীন আশ্রয় পেয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে
নাটোর, ৯ জুন, ২০১৯ (বাসস) : জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের ৩০ বছর ধরে বিধবা জমেলা বেগম-একদিন যার স্বামী ছিল, সংসারে প্রাচুর্য না থাকলেও স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পরে কপাল পুড়ে জমেলা বেগমের। বয়সের ভারে নুব্জ জমেলা বেগমের শুরু হয় অনিশ্চয়তার জীবন। ছেলের চা স্টল থেকে উপার্জিত অর্থে কোন মতে সংসার চললেও ছিল না মাথা গোজার ঠাঁই।
একই উপজেলার ব্রক্ষপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী আব্দুর রাজ্জাক স্ত্রীকে সাথে নিয়ে থাকতেন পাটকাঠির বেড়া আর ছনের চালার ছোট্ট একটা ঘরে। বৃষ্টি হলেই ছনের চালার ফাঁক-ফোকড় দিয়ে ঘরের মধ্যে নেমে আসে পানি। এ সময়ে আশ্রয় হয় প্রতিবেশীর বাড়িতে। প্রতিবন্ধিতার কারণে কাজে অপারগ রাজ্জাকের স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসারের চাকা সচল রেখেছেন।
এসব অসহায় মানুষ-যাদের এক খন্ড জমি আছে, কিন্তু মাথা গোজার ঠাঁই নেই-তাদের জন্যে এগিয়ে এসেছে সরকার। সারাদেশের মত নাটোরেও বাস্তবায়িত হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে এক লাখ টাকার একটি করে বসতবাড়ি। প্রথম পর্যায়ে নাটোর জেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে এক হাজার ৬২০টি বাড়ি।
প্রকল্পের মাধ্যমে উপকারভোগীদের জন্যে তৈরী করে দেয়া হচ্ছে-২৯৭ বর্গফুটের বারান্দাসহ টিনের একটি ঘর আর পাশেই টয়লেট। প্রতিটি বাড়ির উপকরণসহ নির্মাণ খরচ এক লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকৌশলী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
যে ব্যক্তির এক থেকে ১০ শতাংশ জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই অথবা থাকলেও জরাজীর্ণ বসবাসের অনুপযোগী-এমন দুস্থ ব্যক্তি, অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী, উপার্জন অক্ষম ব্যক্তি, ভিক্ষুক, অতি বার্ধক্য ব্যক্তি প্রকল্প সুবিধা পাচ্ছেন।
নাটোর জেলায় প্রকল্প সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে নলডাঙ্গা উপজেলায় রয়েছেন সর্বাধিক ৪০৮ পরিবার কাছাকাছি, ৪০০ পরিবার সুবিধা পেয়েছে নাটোর সদর উপজেলায়, সিংড়া উপজেলায় ২৯৩, লালপুরে ১৫৭, বড়াইগ্রামে ১৪০, গুরুদাসপুরে ১৩০ এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ১০০ পরিবার রয়েছে। মোট এক হাজার ৬২৭ পরিবারের গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রতিটি লক্ষ টাকা হিসেবে জেলায় এ খাতে খরচ হয়েছে মোট ১৬ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা।
নলডাঙ্গা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিনা প্রকল্প থেকে নির্মিত ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত। দিনমজুরের স্ত্রী শাহিনা জানায়, ঝড়-বৃষ্টিতে আর মানুষের বাড়িতে আশ্রয় খুঁজতে হবে না। উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের ঠাকুর লক্ষিকোল গ্রামের দিনমজুর ঝড়– বলেন, ঘর করার সামর্থ্য আমার ছিলনা, ভবিষ্যতে কখনো হতো কিনা জানিনা। আমরা কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে, তাঁর এ উদ্যোগের জন্যে।
প্রকল্পের দিক-নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করেই সুবিধাভোগী দুস্থ পরিবার নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানালেন নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রক্ষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বি জানান, প্রকল্পের নির্দেশিত ডিজাইন ও প্রাক্কলিত ব্যয়ে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সকল সদস্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন। নতুন আশ্রয়ে সুবিধাভোগীদের আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা বোধ দেখে আমরা অভিভূত।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাঃ শরীফুন্নেসা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে উপকারভোগী বাছাই এবং তাদের গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং মনিটরিং করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব পরিবারের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বাসস’কে বলেন, যাদের জমি ও ঘর কোনটাই নাই, যাদের দশ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে কিন্তু ঘর নাই এবং যাদের দশ শতাংশ পর্যন্ত জমি ও জরাজীর্ণ ঘর আছে- এ তিন শ্রেণীতে জেলায় গৃহহীনের মোট সংখ্যা ১৪ হাজার ৭০০। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প তালিকার এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে ভবিষ্যতে কোন ব্যক্তি বা পরিবার আর গৃহহীন থাকবেনা।
বাসস/সংবাদদাতা/১১৫০/-নূসী