বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে ইইসির সঙ্গে স্মারক স্বাক্ষর

677

ঢাকা, ৩ জুন, ২০১৯ (বাসস) : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের (ইইসি) সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে স্মারক স্বাক্ষর করেছেন।
গত ৩১ মে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অবস্থিত ইইসির সদর দফতরে স্মারক স্বাক্ষর হয়। স্মারকে ইইসির পক্ষে স্বাক্ষর করেন মন্ত্রী পদমর্ষাদার কর্মকর্তা কমিশনের বোর্ডের সদস্য তাতিয়ানা ভলোভিয়া।
এসময় বাণিজ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ইইসির সঙ্গে স্মারক স্বাক্ষর হওয়ায় রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি যেমন সম্প্রসারণ হবে,পাশাপাশি এ অঞ্চলে দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই খবর জানানো হয়েছে।
পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের (রাশিয়া,বেলারুশ,কাজাখিস্তান,আরমেনিয়া এবং কিরগিস্থান) সমন্বয়ে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (ইইইউ) গঠিত,যা ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এর সদস্য দেশসমূহ ভূতপূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল এবং বর্তমানে কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেট স্টেটস্ (সিআইএস) এর সদস্য। ইইইউ’র কার্যক্রম পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশন (ইইসি) নামে পরিচিত। ইইইউ গঠন অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মত।
ইইইউ আওতাভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে কাস্টমস ইউনিয়ন গঠিত হওয়ায় এর সদস্য দেশসমূহের মধ্যে কোন কাস্টমস্ বর্ডার নেই। ফলে পণ্য বাধাহীনভাবে কোন প্রকার শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইইইউ’র সকল সদস্য দেশ একই শুল্ক হার এবং অভিন্ন বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করে থাকে।
ইইইউ’র আওতায় মোট ২ কোটি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১৮ দশমিক ২৭ কোটি মানুষ বসবাস করে। এ অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এবং মাথাপিছু আয় ২৭ হাজার ডলার। বিশ্বের চাষযোগ্য জমির ১৪ শতাংশ এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলে গম, তুলা, ভুট্টা ইত্যাদি উৎপাদন হয় এবং ইউরিয়া সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যালস ও খনিজ পদার্থ অর্থনীতির প্রধান উৎস।
এই অঞ্চলে বিশেষ করে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, ওষুধ, আলু এবং সবজীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।এর মধ্যে বর্তমানে রাশিয়ায় স্বল্প পরিসরে তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত চিংড়ি এবং আলু রফতানি হলেও একে বহু গুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বাংলাদেশ দীর্ঘ দিন যাবত রাশিয়ার বাজারে পণ্যের জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়ে আসছে। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে কোন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় এবং রাশিয়া ইইইউ’র আওতায় গঠিত কাস্টমস্ ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় এককভাবে রাশিয়ার পক্ষে বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাশিয়াসহ ইইইউ দেশসমূহে বাংলাদেশের রফতানি বাজার সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার লক্ষে প্রস্তাবিত সহযোগিতা স্মারকটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন। কেননা, এই সহযোগিতা স্মারকের আওতায় একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে যার মূল ভূমিকা হবে বাংলাদেশ ও ইইইউ’র মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চিহ্নিত ১৯টি সেক্টরের উন্নয়নে কাজ করা।এর ফলে,রাশিয়াসহ ইইইউ’র দেশসমূহে বাংলাদেশের রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
ইউরেশিয়ান ইকোনোমিক কমিশনের সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি বাণিজ্যমন্ত্রী রাশিয়ার ফেডারেশন অব চেম্বার এন্ড কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি এবং বাংলাদেশ বিজনেসম্যান এ্যাসোসিয়েশনের সাথে সভা করেন। সভায় রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রফতানির সম্ভাবনা এবং করনীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে মন্ত্রী তার সম্মানে ইইসি আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন।
স্বাক্ষরিত সহযোগিতা স্মারক কার্যকর করার লক্ষ্যে অতিদ্রুত উভয় দেশের অংশগ্রহণে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি সহযোগিতার অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করে বাংলাদেশের সাথে ইউরেশিয়ান ইকোনোমিক কমিশনের সদস্য দেশসমূহের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করবে।