প্রতিকূল অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার পরিস্থিতির মোকাবেলায় ওআইসির পরিকল্পনা গ্রহণের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

1784

মক্কা, ১ জুন, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিকূল অর্থনৈতিক, প্রতিবেশ ও নিরাপত্তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো লক্ষে ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা রুজুর বিষয়েও সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক, প্রতিবেশ এবং নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী এই বিশ্বে ওআইসিকে এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ পবিত্র মক্কা নগরীতে ১৪ তম ওআইসি সম্মেলনে এশীয় গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। সম্মেলনের এবারের শিরোনাম ‘মক্কা আল মোকাররমা শীর্ষসম্মেলন: ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে’।
তিনি বলেন, ওআইসি’র নিজস্ব সমস্যাগুলো মোকাবেলার সক্ষমতা থাকা উচিত কেননা এটির বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ কৌশলগত সম্পদ এবং এর সিংহভাগ তরুণ-যুবক রয়েছে ।
শেখ হাসিনা এ সময় আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমেই জবাবদিহিতা এবং ন্যায় বিচারের প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পথ তৈরী হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াকে এতদূর এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে আবেদন জানাচ্ছি এই মামলা রুজুর বিষয়ে স্বেচ্ছা তহবিল সংগ্রহ এবং কারিগরি সহযোগিতার জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্বেও বাংলাদেশ মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ বোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় প্রদান করেছে।
‘কিন্তু তাঁদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন এখনো অনিশ্চিত-কেননা উত্তর রাখাইন রাজ্যে এসব রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য যে ধরনের অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন তা সৃষ্টিতে মিয়ানমার তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ধারবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে বাংলাদেশ করেছে, আসুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সে ধরনেরই একটি জিরো টলারোন্স নীতি গ্রহণ করি, সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসীদের দলকে যেকোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং উগ্রপন্থা বাস্তবায়নে বাধা দেই এবং জোটবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যাই।’
এই প্রসংগে তিনি সন্ত্রাস বন্ধে রিয়াদ সম্মেলনে ঘোষিত মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রদত্ত তাঁর ৪ দফা নীতির কথা স্মরণ করেন।
যার মধ্যে রয়েছে-অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা, সন্ত্রাসের জন্য অর্থায়ন বন্ধ করা, মুসলিম উন্মাহর মধ্যকার বিভাজন দূর করা এবং সংলাপের মাধ্যমে যে কোন প্রকার দ্বন্দের শান্তিপূর্ণ সমাধান।
২১শ শতকের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য ওআইসির উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা খুবই আশা জাগানিয়া যে, নিজেকে ২১ শতকের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ওআইসি উন্নয়ন এবং সংস্কারের অতি প্রয়োজনীয় পথ গ্রহণ করেছে ।
তিনি একইসঙ্গে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ইসলামের মূল দর্শনকে মূল্য দেওয়াসহ সংগঠন, সমতা এবং ন্যায় বিচার সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা:) নির্দেশিত পথ অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন।

ফিলিস্তীন সমস্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি আমাদের ফিলিস্তিনী ভাই-বোনদের ভূখন্ড এবং সার্বভৌমত্বের অধিকার ফিরে পাওয়া, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মর্যাদা রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর জনগণের মধ্যে একতা এবং সহযোগিতাকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে আস্থাশীল ছিল।
‘কিন্তু ৭ দশক কেটে গেছে- ফিলিস্তিনীদের সমস্যার আজো সমাধান হয় নাই এবং আমাদের জাতি এবং সম্প্রদায়গুলো এখন পর্যন্ত দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম- যা একদা অন্ধকার বিশ্বে আলোক বর্তিকা নিয়ে এসেছিল কেবলমাত্র ভূলভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য তা আজ ভূলপথে সন্ত্রাস এবং উগ্রপন্থার নীতি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ।
শ্রীলংকার বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়সহ পাঁচ তারকা হোটেলে বোমা হামলা এবং নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে জুম্মা’র নামাজের সময় সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দু’টি ঘটনাতেই শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানূভুতি এবং সমবেদনা প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রীলংকার সন্ত্রাসী হামলার নিন্দাও জানিয়েছি, যেখানে আমার এক নাতী- ৮ বছরের শিশু শেখ জায়ান নিহত হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া এবং অন্যত্র নির্দয়ভাবে প্রতিনিয়ত হতাযজ্ঞের শিকার হওয়া জনগণের দুঃখ-কষ্ট এবং যন্ত্রণা বাংলাদেশ অনুধাবন করতে পারে।
দারিদ্রকে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরজন্য মূলত অজ্ঞতা, দুর্যোগ এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দায়ী।
‘এই অসামঞ্জস্যকে দূর করতে আমাদেও যৌথভাবে ‘ওআইসি-২০২৫: অ্যাকশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, ’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর জন্য আমাদের ওআইসি’র কর্মসূচির আওতায় ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকসহ ওআইসি’র প্রতিষ্ঠানসমূহের নীতি এবং অনুশীলনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
শেখ হাসিনা এ সময় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফরম মাইগ্রেশন)-এর উপ-মহাপরিচালক পদের জন্য বাংলাদেশের প্রার্থী অভিভাষণ বিশেষজ্ঞ পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হককে তাঁদের মূল্যবান সমর্থন দানের অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। মুসলিম বিশ্বকে একটি শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তোলায় তাঁর দূরদর্শিতা, সহনশীলতা এবং সমমর্মিতা আজ অবদি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি)-কে বাংলাদেশ যেভাবে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলছে তাতে অংশ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সকলের প্রতি আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বলেন, ধারণার সন্নিবেশন এবং উদ্ভাবনকে বিক্রয়যোগ্য পণ্য এবং সেবায় পরিণত করাই আজকের ইসলামি বিশ্বের প্রয়োজন।