নিরবচ্ছিন্ন নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ এখন আর স্বপ্ন নয়

327

॥ সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ॥
ঢাকা, ২৯ মে, ২০১৯ (বাসস) : দেশবাসীর জন্য নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভরযোগ্য ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার আর স্বপ্ন নয়। বর্তমানে দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতার মধ্যে এসেছে, যা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ।
‘জ্বালানী, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, নসরুল হামিদ বাসসকে জানান ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকার ২০২১ সাল নাগাদ দেশের প্রতিটি নাগরিককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করে।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ইতোমধ্যে ২১ হাজার ৪১৯ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে এবং সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০২৩ সালের মধ্যে তা বাড়িয়ে ২৮ হাজার মেগাওয়াট করা এবং সারাদেশে ২৩ হাজার সার্কিট কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করা।
নসরুল বলেন, বর্তমানে তার মন্ত্রণালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে সকল নাগরিকের জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মতে, সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার সার্কিট কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এছাড়া সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে।
এদিকে, দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানী চাহিদা মোকাবেলার লক্ষ্যে সরকার জাতীয় গ্যাস গ্রিডে এলএনজি যুক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আনা এলএনজি এর সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়াও চলছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ সংযোগের সংখ্যা ৩ কোটি ৩২ লাখ। ২০০৯ সালেএই সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ। বর্তমানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমান ৪৬৪ কিলোওয়াট।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)- তে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেছে যে, দেশের সর্বত্র নির্মাণাধীন কয়লা ও এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানী সরবরাহ সহজতর করার লক্ষ্যে তারা মহেশখালী, মাতারবাড়ী ও পায়রাতে তিনটি পৃথক জ্বালানী কেন্দ্র স্থাপন করবে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে মোট ১৩,৬৫৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৫৫ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে এবং মোট ৭,৪৬১ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন অপর ২৪ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে রয়েছে।
সরকার পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ী ও মহেশখালীতে মোট ৯ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন মোট আটটি কয়লাভিত্তিক মেগা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।
সুত্র জানায়, আটটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে, পটুয়াখালীর পায়রায় অবস্থিত প্রথম ১৩ শ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের ৫০ শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী বছর নাগাদ এটির উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মাতারবাড়ীতে ১২শ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে এবং ২০২৩ সাল নাগাদ এর উৎপাদন শুরু বলে আশা করা হচ্ছে। বাগেরহাটের রামপালে ১,৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
এছাড়া পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি-২ ইউনিট) নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় ২০২২ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।