রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাপানের পূর্ণসমর্থন

721

টোকিও, ২৯ মে, ২০১৯ (বাসস) : রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমিতে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি জাপান আজ পূর্ণসমর্থন ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মধ্যে বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ সমর্থন ব্যক্ত করা হয়।
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পালিয়ে আসার ফলে উদ্ভূত দীর্ঘস্থায়ী সংকটের ‘একটি টেকসই ও আশু সমাধান’ নিয়ে আলোচনা করেন।
শেখ হাসিনা এ সংকটে গভীরতা উপলব্ধির জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবে ও আমি এই মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটের একটি টেকসই ও আশু সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জাপান অনুধাবন করে যে, এ সংকটের সমাধান বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে দ্রুত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। আর এ জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’
শেখ হাসিনা এ সংকট মোকাবেলায় উদার সমর্থন এবং মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত লোকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ও আবে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া ও বন্ধুত্বের নিরিখে আমি আস্থাবান যে আমরা তা অর্জন করবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, দুই নেতা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৪০তম ওডিএ ঋণ প্যাকেজ স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এই ঋণ প্যাকেজের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী আবেকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরো বাড়াতে ও জোরদার করতে বেশ কিছু নতুন ধারণা বিষয়ে দু’জন একমত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দুই দেশ পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে এমন সকল ক্ষেত্র খুঁজে দেখার ব্যাপারে একমত হয়েছি।’
তিনি বলেন, তাদের আলোচনায় দুই দেশের সকল সম্ভাবনা পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয় প্রাধান্য লাভ করে, কার্যকর সংযোগ প্রতিষ্ঠায় যা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে জাপান সেই টার্গেট অর্জনে আমাদের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে উন্নয়নের গুরুত্ব বিবেচনা করে তারা সেখানে মানসম্মত অবকাঠামো গড়ে তোলার বিভিন্ন ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, তারা সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারেরও সিদ্ধান্ত নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপদ রাখতে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে উদ্ভূত ঝুঁকি প্রশমন এবং বিপারমাণবিকরণ নিশ্চিত করতেও সম্মত হয়েছি। সর্বোপরি আমরা শান্তি ও জ্ঞানের দিগন্ত সম্প্রসারিত করতে পরস্পরের প্রয়াসে সহযোগিতা প্রদানেও সম্মত হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন যে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং যেহেতু বাংলাদেশ এর মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সকল পূর্ব শর্ত পূরণ করেছে সেহেতু ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।’
তিনি বলেন, তারা দু’জন সম্মত হয়েছেন যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল এবং ‘আমরা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছি’।
জাপান বাংলাদেশের জনগণের অন্তরে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে জাপান যে পর্যায়ের অঙ্গীকার প্রদর্শন করে আসছে তা সত্যিই উল্লেখযোগ্য।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন এবং তাঁর উন্নয়নের চিন্তা ধারা জাপানের উন্নয়নের ইতিহাস দ্বারা বহুলাংশে প্রভাবিত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার ৪৮ বছরেরও বেশি সময় পর এখন আমরা আস্থার সাথে বলতে পারি যে, আমরা সেই স্বপ্ন পূরণে সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছি। আর জাপানকে সব সময় আমাদের পাশে পাওয়া আমাদের আরও আস্থাবান করে।’
জাপানে আসা তার জন্য সব সময় আনন্দের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে সুন্দর সম্প্রীতির সূচনায় নতুন যুগ ‘রেইওয়া’র প্রারম্ভে এখানে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। ’
এছাড়া তিনি জাপানে তাঁকে দেয়া আতিথেয়তার প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সিংহাসনে আরোহণের আনন্দঘন মুহূর্তে তিনি, রাজ পরিবারের সদস্যগণ এবং জাপানের জনগণকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাঁর বিবৃতিতে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে নিরাপত্তার সাথে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখবো।’
২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান হামলায় ৭ জাপানি নাগরিকে মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এছাড়া সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ দেখান।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক এবং আরও বিস্তৃত অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে মতবিনিময়ে আমরা একটি ঐকান্তিক বৈঠক করেছি।’
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশে অসামান্য উন্নয়নেরও প্রশংসা করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগমন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগমন করলে তাঁকে সেখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।