শেরপুরে স্যানিটেশনে উন্নতি হয়েছে

1129

॥ এম আর পাটোয়ারী ॥
ঢাকা, ২৯ মে, ২০১৯ (বাসস) : জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা একটি অন্যতম শর্ত। এ শর্ত পূরণে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। অনেক উন্নতি করেছে। কেননা, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ স্যানিটেশনকে মানবাধিকাার হিসেবে গণ্য করে আসছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার স্যানিটেশনে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি স্যানিটেশনকে রাজনৈতিক অঙ্গীকারে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।
দেখা গেছে, এক সময় ৯০ ভাগ মানুষ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতো। তখন মানুষ কলেরা, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস বি-সহ নানা রকম পেটের পীড়ায় ভুগতো। বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেয়ায় উন্মুক্তস্থানে মলত্যাগ এখন নেমে এসেছে প্রায় ১ ভাগে। এরফলে মানুষের পেটের পীড়া অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
উল্লেখ্য, স্যানিটেশন ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হলেও দেশের পার্বত্য ৩ জেলার দূর্গম অঞ্চলে স্যানিটেশন ব্যবস্থা পিছিয়ে আছে। দূর্গম অঞ্চল হওয়ায় স্যানিটেশন সুবিধা তাদের কাছে এখনো পুরোপুরি পৌঁছেনি।
উল্লেখিত ৩ জেলা ব্যতিত দেশের আরো পার্বত্য এলাকা রয়েছে। যেমন ময়মনসিং, জামালপুর, নেত্রকোনা ও শেরপুর। এসব জেলা পাহাড় দূর্গম নয়। সমতল ভূমির পাশাপাশি পাহাড়গুলোর অবস্থান। তাই এসব জেলার স্যানিটেশনের নাজুক অবস্থা কেটে উঠেছে। বিশেষ করে শেরপুর জেলায় স্যানিটেশনের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
এ উন্নতির কথা স্বীকার করেছেন জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলা বালুঝুড়ি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, জেলায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা আগের মতো নেই। আগে মানুষ ঝোঁপে-জঙ্গলে এবং ক্ষেতের আড়ালে পায়খানা করতো, দিন পাল্টে গেছে। মানুষ সচেতন হয়েছে। এখন বাড়ি-বাড়ি ল্যাট্রিন। মানুষ এখন উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে না। তিনি বলেন, শতভাগ স্যানিটেশন উন্নীত হয়েছে। জাহিদুল ইসলাম সমতল এলাকার মানুষ। তার কাছে এটাই দৃশ্যমান হয়েছে।
নকশি গ্রাম পরিচালক জাগেন কোচ সমতল এলাকার মানুষ। তিনি জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোচ হাজং বর্মন সম্প্রদায়ের অনেক লোক দরিদ্র এবং পাহাড়ে বসবাস করে। তাদের অনেকে স্যানিটেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আর করলেও একেবারে অনুন্নত, পরিবেশ দূষণ করে। তিনি জানান, কারিতাস, ওয়ার্ল্ডভিশন, ব্র্যাক স্যানিটেশনে সহযোগিতা করছে। ইউনিয়ন পরিষদও কাজ করে যাচ্ছে।
নালিতাবাড়ীর নন্নী এলাকার নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়ন সংস্থা’র (আইইডি) কর্মী সুমন্ত বর্মন জানান, আগে মানুষের লেখাপড়া কম ছিল, সচেতনতার অভাব ছিল, তাই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন ছিল না। স্যানিটেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হতো। সেটাও তারা জানতো না। এখন মানুষ বুঝতে পারছে। তাই বাড়ি-বাড়ি ল্যাট্রিন দেখা যায়।
সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা জানান, জেলায় ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী অনেক মহিলা ক্ষেতে কাজ করলেও তাদের ধ্যানÑধারণা বদলে গেছে। তারা এখন স্বাস্থ্য সচেতন। শিশুসেবা, মাতৃসেবা সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখে। নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বাড়ির পাশে তারা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আর এতে সহযোগিতা করছে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ।
শেরপুরের জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামাল হোসেন জানান, পৌরসভায় ৯২ ভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থার কভারেজ হয়েছে। পল্লী এলাকায় ৮৭ দশমিক ৫৫ ভাগ মানুষ স্যানিটেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। ৩টি স্তরে স্যানিটেশন উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রথম স্তরে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৫০ দশমিক ৫০ উন্নীত করা সম্ভ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে এসে দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ৫৫ ভাগ। তৃতীয় ধাপ এখন চলমান। বিনামূল্যে পরিবার প্রতি ৫টি রিং, একটি স্লাব প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলা, জেলা পরিষদ এসব সরবরাহ করছে। তবে পাহাড়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে এনজিওগুলোর তেমন তৎপরতা নেই। তবে কারিতাস হাই স্কুলগুলোতে স্যানিটেশনের কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন (এমডিজি) সময় কালে বাংলাদেশ স্যানিটেশনে অনেক উন্নতি করেছে। বাংলাদেশ ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী স্যানিটেশন বেইজ লাইন জরিপ পরিচালিত হয়। তাতে উন্নত স্যানিটেশন কভারেজ ছিল ৩৩ শতাংশ। ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে ৬১ শতাংশ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন ব্যবহার করে। ১০ শতাংশ মানুষ অনুন্নত স্যানিটেশন এবং ২৮ শতাংশ শেয়ারড ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২০০৩ সালের পর উন্নত স্যানিটেশন কভারেজ ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য বড় সাফল্য।
এমডিজি পরবর্তী পর্যায়ে ২০১৬-২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ঘোষণা করেছে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার পর্যাপ্ত ও সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বাংলাদেশ সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জাতীয় স্যানিটেশন মাস অক্টোবর-২০১৮ এর মূল প্রতিপাদ্য ছিল টেকসই উন্নয়ন,স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন। স্যানিটেশনের উন্নয়ন ঘটেছে।