সুনামগঞ্জে বাদাম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

594

সুনামগঞ্জ, ১৩ মে, ২০১৯ (বাসস) : জেলার সদর উপজেলা, বিশ^ম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় এবার বাদামের ব্যাপক চাষ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বাদাম চাষের প্রতি তাদের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলছেন, বাদাম চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। একই জমিতে বছরে দুইবার বাদাম চাষ করা সম্ভব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলা, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা এবং তাহিরপুর উপজেলায় বাদাম চাষের উপযোগি মাটি রয়েছে। গতবছর এই জেলায় বাদামের চাষ হয়েছিল সাড়ে ৩ শত হেক্টর জমিতে। এবার চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। আবার একই জমিতে বছরে দুইবার বাদাম চাষ করা সম্ভব।
বাদাম চাষিরা জানান, জেলায় দুইধরনের বাদামের চাষ হচ্ছে। একটি চিনাবাদাম, অপরটি দেশিয় বাদাম। দেশীয় বাদামে ২-৩টি দানা বা বীজ অথবা থাকে, চিনাবাদামের থাকে ৪-৬ টি দানা বা বীজ। তবে দেশিয় বাদামের উৎপাদন ভাল হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক চাষি।
তারা জানান, বাংলা ভাদ্রমাসের শেষের দিকে বাদাম চারা রোপন করলে পৌষ মাসে অর্থাৎ চারমাসে বাদামের গাছ ও বাদাম বড় হয়। তখন বাদাম ঘরে তোলা যায়।বাদাম তোলার পর একই জমিতে পুনরায় বাদামের চারা রোপন করা হয়। পৌষমাসে বাদাম গাছের চারা রোপন করলে জ্যৈষ্ঠের প্রথমদিকে দ্বিতীয় ধাপের বাদাম ঘরে তুলতে পারেন চাষিরা। এভাবে বছরে দুইবার বাদামের উৎপাদন হয়।
সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মুসলিমপুর, সৈয়দপুর, কৃষ্ণনগর, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের চৌমুহনী, ঝরঝরিয়া,গোদীগাঁও, সাহেবনগর, ইসলামপুর, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের জিনারপুর, মহাকুড়া, ভাদেরটেক, বেড়েরগাঁও, মথুরকান্দি, বাঘবেড়, গুলগাঁও, ধনপুর ইউনিয়নের সিলডোয়ার, কাইতকোনা, চিনাকান্দি, দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন ও পলাশ ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে ব্যাপকভাবে বাদাম চাষ হয়। এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার বিন্নাকুলি, লাউড়েরগড়, বাদাঘাট, ঘাগটিয়া, বালিজুরী এলাকায় বাদামের চাষ হয়।
সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ঝরঝরিয়া গ্রামের রহিম আলী বলেন,‘ এখানকার মাটি বাদাম চাষের উপযোগি। তাই বাদামের ফলন ভাল হয়।’
তাহিরপুর উপজেলার পুরানলাউড় গ্রামের শহীদুল মিয়া বলেন,‘বাদাম চাষ লাভজনক। তাই প্রতিবছর এলাকার অনেক চাষী বাদাম চাষ করেন।’
বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের বেড়েরগাঁও গ্রামের চাষি স্বাধীন মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর ১ কেয়ার (৩৩ শতাংশ) জমিতে আমরা বাদামের চাষ করি। এবার করেছি আড়াই কেয়ার জমিতে। বাদামের ফলন ভাল হয়। একই জমিতে বছরে দুইবার বাদাম চাষ করা যায়।’
একই গ্রামের শামীম আহমদ বলেন,‘বাদাম চাষে যে খরচ হয়। খরচ বাদে লাভহয় অনেক বেশি। এবার আমি চাষ করেছি ৫ কেয়ার (১ কেয়ার= ৩৩ শতাংশ) জমিতে। প্রতি কেয়ারে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা করে। প্রতি কেয়ারের বাদাম বিক্রি হবে প্রায় ২৮ হাজার টাকা করে। গতবারের চেয়ে এবার দুইকেয়ার বেশি করেছি বাদাম চাষ।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বশির আহমদ বলেন,‘বাদাম চাষ খুবই লাভজনক। বছরে দু’বার একই জমিতে বাদামের চাষ করা যায়। জেলার সদর উপজেলা, বিশ^ম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায় বাদাম উৎপাদন উপযোগি মাটি রয়েছে। এসব উপজেলার মাটি ভাল থাকায় এখানে ভুট্টা ও তরমুজ চাষও ভাল হচ্ছে।’
বাদাম চাষে চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গতবছর বাদামের চাষ হয়েছিল সাড়ে ৩শ’ হেক্টর জমিতে। এবার হয়েছে ১ হাজার ৪শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে।’