খুনি ও অর্থ-পাচারকারীদের ক্ষমা নাই : প্রধানমন্ত্রী

2043

লন্ডন, ৯ মে ২০১৯(বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এখানে লল্ডনে লুকিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, খুনি ও অর্থ-পাচারকারীদের অবশ্যই শাস্তি হবে।
তিনি আজ বিকেলে এখানে তাজ হোটেলে এক মত বিনিময় সভায় বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। খুনি ও অর্থপাচারকারীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, যত টাকাই খরচ করুক, তাদের কোনো ক্ষমা নেই এবং জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, আদালত খুনি ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। ‘আমরা এই রায় কার্যকরের পদক্ষেপ নেবো। তারা যত স্লোগানই দিক, যত তিরস্কারই করুক, তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলো এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ এত সভাপতিত্ব করেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি’র অপপ্রচারের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যাদের জন্মের কোন বৈধতা নেই তারাই সবকিছুতে অবৈধ খুঁজে বেড়ায়।
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা নিয়ে কারবার করাই বিএনপি’র ব্যবসা এবং তারা এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করে এবং বিদেশে অর্থ পাচার করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছে।’
‘তবে, আমি বিশ্বাস করি, সত্যের জয় হবেই,’ যোগ করেন তিনি।
বিগত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় এবং গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের চমকপ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। যাতে করে বিজয় সমুন্নত থাকে এবং অতীতের মতো বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে এবং দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করতে না পারে।’


দীর্ঘ প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার নিজস্ব অর্থ দিয়েই পদ্মা নেতু নির্মাণ করছে এবং ইতোমধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার সেতুর প্রায় ২ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু আমরা সেই অভিযোগ মেনে নেইনি বরং আমরা এর প্রতিবাদ করেছি কারণ সেই সাহস আমাদের ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেন তাদের অভিযোগ মেনে নেব, যে কাজ আমরা করিনি। একটি সংস্থা আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছিল এবং আমরা তা মেনে নেইনি কেননা তা কখনও ঘটেনি। আমরা কোন অভিযোগ ঘাড়ে করে ক্ষমতায় আসতে চাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি কোন মিথ্যা অভিযোগের দায় নিতে পারি না এবং আমি জানি মানুষ সত্য ভালবাসে এবং মর্যাদা দেয়, আমি এও জানি সত্যের পথ সবসময়ই কঠিন এবং সে পথেই আমি এ পর্যন্ত এসেছি।’

গত নির্বাচনে বিএনপি’র ভরাডুবির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলটি নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ না করে মনোনয়ন বাণিজ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
তিনি বলেন, ‘তারা এক একটি আসনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করে এবং যাদের নির্বাচনে বিজয়ের সম্ভাবনা ছিল তাদেরকেই তারা বাদ দিয়ে দেয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাঁর দল নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন করেছে। কারণ মহিলা এবং যুবসমাজ ব্যাপকহারে নৌকার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
বিগত ১০ বছরের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর সংস্থান করতে তাঁর সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তাঁর সরকার দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের বেশ কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে এ অর্থবছরের শেষ নাগাদ দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।’
প্রধানমন্ত্রী সংকল্প ব্যক্ত করে বলেন, এদেশে আর কেউ গৃহহীন থাকবে না, কেউ কুঁড়ে ঘরে বাস করবে না।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার একটি সময়োপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে এবং মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে।
দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান প্রদান করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ঝরেপড়া রোধ করতে স্কুলগুলোতে মিড ডে মিল চালু করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারের এই প্রচেষ্টার সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলায় তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যাক্ত করে বলেন, ‘আমরা ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপন করবো।’
তাঁর সরকার আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ভিত্তি করেই দেশের অর্থনীতি এখন শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণ এবং প্রবাসীদের মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানান।
তিনি সকলকে আগাম ঈদ শুভেচ্ছাও জানান।