খালেদা জিয়ার জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত

408

ঢাকা, ১৪ মার্চ, ২০১৮ (বাসস) : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদন বিষয়ে বুধবার সকালে এ আদেশ দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন।
বুধবার মামলাটি উত্থাপিত হলে দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি শুরু করেন। তিনি বলেন, চার যুক্তিতে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করে। আমরা এখনো সেই জামিন আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি পাইনি। মঙ্গলবার অনুলিপি বের হতে হতে অফিস সময় শেষ হয়ে গেছে।
এ সময় আদালত বলেন, আগে লিভ টু আপিল দায়ের করেন।
এ সময় খুরশীদ আলম খান বলেন, সেজন্য জামিন আদেশ স্থগিত চান।
পরে আদালত বিষয়টি ১৮ মার্চ রোববার পর্যন্ত মুলতবি করে এবং ওইদিন পর্যন্ত জামিন আদেশও স্থগিত করে আদেশ দেয়।
খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতে আনা পৃথক আবেদন আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে প্রেরণ করে আজ শুনানির জন্য গতকাল আদেশ দেয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্র্টের দেয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে সোমবার চার মাসের জামিন দিয়ে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে-বেগম খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক প্রস্তুত করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পর যে কোনো পক্ষ চাইলে আপিল শুনানির জন্য আদালতে মেনশন (উপস্থাপন) করতে পারবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া আদেশে বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নি¤œ আদালতের নথি আসার পর এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ (এডমিট) করে হাইকোর্টের এ বেঞ্চ। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানার দন্ডাদেশ স্থগিত করা হয়। পাশাপশি নিম্ন আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয়।
গত রোববার এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি উচ্চ আদালতে পৌঁছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদন্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ২২৩ পৃষ্ঠার আপিল দায়ের (ত্রিমিনাল আপিল নং: ১৬৭৬/২০১৮) করা হয়। আপিল আবেদনে নিম্ন আদালতের পাঁচ বছরের দন্ড থেকে খালাস চেয়ে বিভিন্ন যুক্তি দেখানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য সিনিয়র এডভোকেট আব্দুর রেজাক খান ফাইলিং ল’ইয়ার হিসেবে এ আপিল মামলা দায়ের করেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে রায়ের অনুলিপি ১১৬৮ পৃষ্ঠা ও আদেশ ৬ পৃষ্ঠাসহ মোট ১১৭৪ ফোলিও প্রিণ্ট দেয়া হয়। প্রকাশিত এ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদন্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় দেয়। সাজার রায় ঘোষণার পরপরই রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সেখানে সাজাভোগ করছেন খালেদা জিয়া।