ঘূর্ণিঝড় ফণি : সারাদেশে নিহত ১৮

553

ঢাকা, ৪ মে, ২০১৯ (বাসস) : প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণি’র প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়, বজ্রপাতে ও বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে ১৮জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণি’র প্রভাবে শুক্রবার ও আজ শনিবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বাসসকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণি’র প্রভাবে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় আজ ভোরে জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কুরালিয়া গ্রামে ঘর চাপা পড়ে আনোয়ারা বেগম (৫০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে এই এলাকার ২০/২৫টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাসস’র চাঁদপুরে সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে জেলার শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সদর উপজেলার মেঘনার পশ্চিম পাড়ের ১৩ নং হানারচরের ২ গ্রামে ২০টি ঘর ও ১৪ নং রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চরের তিনটি গ্রামে ৫০টি, হাইমচরের ২টি ইউনিয়নে ১৫টি, মতলব উত্তর উপজেলার জহিরাবাদ ইউনিয়নে ১০টিসহ তিন উপজেলায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গতরাত ভোর পৌনে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে ৫ জন আহত হন।
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলার সূবর্ণচরে ঘূর্ণিঝড় ফণী প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি নিয়ে আঘাত হেনেছে। এতে ঘর চাপা পড়ে চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামের আবদুর রহমানের ২ বছরের শিশু সন্তান মো. ইসমাইল নিহত হয়েছে। চর ওয়াপদা ও চর জব্বর ইউনিয়নে ৩০ জন আহত এবং শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহতদেরকে সূবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে উপজেলা কন্টোলরুমে দায়িত্ব পালনরত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানান।
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় শনিবার ভোররাতে ঘরের নিচে চাপা পড়ে একটি পরিবারের দাদি ও নাতির মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন- আব্দুল বারেকের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬০) ও তার নাতি জাহিদুল ইসলাম (৮)। এদের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়ার খাল গ্রামে।
চরদুয়ানি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য শাহীন মিয়ার বরাত দিয়ে পাথরঘাটা থানা সূত্র জানিয়েছে, স্বেচ্ছাসেবকরা ওই পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে বারবার যেতে তাগিদ দিলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মোর্শেদ চৌধুরী জানান, ফণি’র প্রভাবে শুক্রবার জেলার পাকুন্দিয়া, মিঠামইন ও ইটনা উপজেলায় বজ্রপাতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে পাকুন্দিয়ার ৩ জন, মিঠামইনের ২ জন ও ইটনার ১ জন রয়েছেন।
নিহতরা হলেন- পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের কুর্শাকান্দা গ্রামের আয়াজ আলীর ছেলে আসাদ মিয়া (৫৫), একই উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের আলগীরচর গ্রামের আবদুল হালিমের মেয়ে নুরুন্নাহার (৩০), একই এলাকার এন্তাজ আলীর ছেলে মুজিবুর (১৭), মিঠামইন উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের বিরামচর গ্রামের গোলাপ মিয়ার ছেলে মহিউদ্দিন (২৩), একই উপজেলার কেওয়াজোড় ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের এবাদ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (৭) ও ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কাটুইর গ্রামের রাখেশ দাসের ছেলে রুবেল দাস (২৬)।
এছাড়া জেলার তাড়াইল উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামে কলা গাছে বিদ্যুতের তার সংযোগ হওয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮/৯ বছরের একটি কন্যা শিশু মারা গেছে বলে তিনি জানান।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, জেলার মদন উপজেলায় গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের কদমশ্রী হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আব্দুল বারেক (৩৫)। তিনি মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের মনিকা পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত রোমালির ছেলে।
জেলার খালিয়াজুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম মাহমুদ আলী জানান, উপজেলার চাকুয়া ইউনিয়নের পটুয়াগ্রামের কৃষক মহসিন (২৭) মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাসসকে জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে চোরামনকাটি গ্রামে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে শাহানুর বেগম (৩৫) নামে এক নারী নিহত হন। তিনি ওই গ্রামের মোজাহারের স্ত্রী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, জেলার নবীনগর উপজেলায় বজ্রপাতে আপেল মিয়া (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টির সময় এ ঘটনা ঘটে।
মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ ঘিরে দেয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচলের সময় শুক্রবার বিকেলে এক যাত্রী নিহত ও ১০ যাত্রী আহত হন। স্পিডবোট ও ট্রলারের সংঘর্ষে আহত মো. মুরাদ (২৫) নামের যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় আমির হামজা নামে ৬ বছর বয়সী এক শিশুসহ ২১ বছর বয়সী এক যুবকের লাশ আজ উদ্ধার হয়েছে।