যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে সরকার কঠোর আইন প্রণয়ণ করবে : প্রধানমন্ত্রী

1734

সংসদ ভবন, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে তাঁর সরকার কঠোর আইন প্রণয়ন করবে, যাতে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, ‘যারা যৌন নিপীড়ন করবে তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, সে ব্যবস্থা আমরা করবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনে যা যা করণীয় আমরা তা করবো। আর যৌন নিপীড়ন যারা করবে তাদের ক্ষমা নেই। অনেক সংসদ সদস্য বলেছেন এরজন্য একটা কঠোর আইন করা দরকার। আমরা ইতোমধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজনে এজন্য যদি কঠোর আইন করতে হয় ইনশাল্লাহ করবো।’
নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকায় সন্ত্রাসী হামলা এবং নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সব দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে সংসদে আজ সরকারি দলের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪১ (১) বিধি অনুসারে উত্থাপিত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একথা বলেন।
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
নুসরাতের ঘটনাটি তাঁর নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সাথে সাথে পুলিশকে নির্দেশ দেই কে কোন দল করে সেটা আমরা দেখতে চাইনা। অপরাধী অপরাধীই। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। কারণ এই ধরনের ঘটনা কখনই মেনে নেয়া যায় না।’
তিনি বলেন, শিক্ষক পূজনীয়। তিনি বাবা-মা’র মতো। তাঁর কাছে শিখবে। সেই শিক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই। আর সেটা যদি হয় মাদ্রাসায়।
তিনি এ সময় আশংকা ব্যক্ত করেন, যখনই এ ধরনেরা কোন ঘটনা ঘটে এবং এটার প্রচার হতে থাকে তখন দেখা যায় কোন ঘটনা একটার পর একটা সিরিয়ালি ঘটে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে, আমি এটুক বলবো যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। সেক্ষেত্রে কোন দল, মত আমি দেখবো না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘জঙ্গিবাদ আজকে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপীই একটি সমস্যা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজেই এটা এখন মোকাবেলা করার জন্য আমাদের দেশে এবং দেশের বাইরে সমগ্র বিশ্বব্যাপী একটা জনমত সৃষ্টি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রীলংকার সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় জায়ান চৌধুরীসহ ২৫৩ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে জায়ান চৌধুরীর বাবাও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে এবং শ্রীলংকার গীর্জা ও হোটেলে (সন্ত্রাসী হামলার) ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। আর এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমি বাংলাদেশের জনগণকে সজাগ থাকার আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশেও চেষ্টা করা হয়েছিল হলি আর্টিজানের ঘটনায়। সেখানে আমরা কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাদের দমন করতে সক্ষম হই। কিন্তু এর পর শোলাকিয়াতে ঈদের জামাতে হামলা করার চেষ্টা হয়। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‌্যাব তদন্ত করে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের কোন সামান্য আলমতও পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, গোয়েন্দারা সঠিক সময়ে তথ্যটা দিতে পারছে বলেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিতে পারছে এবং অনেক জান-মাল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কারো কাছে কোন কিছু যদি অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় তাহলে সাথে সাথে তারা যেন এটা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে জানায়। যাতে এধরনের ঘটনার আমরা মোকাবেলা এবং মানুষের জান-মাল রক্ষা করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পিতার হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার আমাদের ছিল না। তখন বুকে পাথর বেঁধে সেই শোক-শক্তি নিয়ে আমরা ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছি এবং যখন সরকারে এসেছি জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। কখনও প্রতিশোধ নেয়ার কথা চিন্তা করিনি।’
সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পরেই কেবল সে বিচারের রায় কার্যকর করতে পেরেছে।