বাসস ক্রীড়া-১১ : মাশরাফির জন্য বিশেষ কিছু করতে চান মুশফিকুর

276

বাসস ক্রীড়া-১১
ক্রিকেট-মুশফিক
মাশরাফির জন্য বিশেষ কিছু করতে চান মুশফিকুর
ঢাকা, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্য হলেও আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করতে চান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। আয়ারল্যান্ড ও বিশ্বকাপের আগে অনুশীলন ক্যাম্পে আজ এ কথা বলেন মুশি। তিনি বলেন, ‘এটাই হয়তো এক সাথে বা আমাদের শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে। মাশরাফি ভাই যদি এরপরে আর বিশ্বকাপ খেলতে না পারে এটাই আমাদের এক সঙ্গে শেষ বিশ্বকাপ। যে কারণে আমরা সবাই চাইব মাশরাফি ভাই’র জন্য হলেও যেন বিশেষ কিছু করতে পারি। যেটা কি না স্মরণীয় হতে পারে। আমার মনে হয় এটা অবশ্যই অনেক বড় সুযোগ। একই সাথে এই বিশ্বকাপে আমাদেরও সুডোগ আছে ভালো করার।’
এবারের আসরে বাংলাদেশের হয়ে এক সাথে চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন অধিনায়ক মাশরাফি, সাকিব আল হাসান, মুশফিক ও তামিম ইকবাল। তাই এক সাথে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন তারা। আর এই বিশ্বকাপটি স্মরনীয় করে রাখার ইঙ্গিত দিলেন মুশফিক। তিনি বলেন, ‘শুধু বিশ্বকাপ না, বাংলাদেশের হয়ে আপনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবেন, একটা টুর্নামেন্ট খেলবেন। এটা যে কোন ক্রিকেটারের জন্য গর্ব ও সম্মানের বিষয় । আর বিশ্বকাপ তো অবশ্যই অনেক বড় মঞ্চ। আর আমরা চারজন আছি, আমাদের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। আমাদের ইচ্ছে আছে এটাকে স্মরণীয় করে রাখার ও ইচ্ছে আছে শেষ পর্যন্ত যাবার। আমার মনে হয় এটা অসাধ্য কিছুই না। হয়তো বা অনেক কঠিনসাধ্য একটা কাজ। তবে যে কোনো কাজই সহজে অর্জিত হলে সেটার মজাটা আসলে থাকে না। আমার কাছে মনে হয়, আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের যথেষ্ট সামর্থ্য আছে নক আউট পর্বে যাওয়ার। আর নক আউট পর্বে গেলে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। আমাদের সামনে আয়ারল্যান্ড সিরিজটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকেই সেই ইতিবাচক ছন্দটা রপ্ত করতে হবে।’
নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপকে ক্যারিয়ারের সেরা পারফরমেন্স করার মঞ্চ হিসেবে মনে করেন মুশফিক। তিনি বলেন, ‘তা তো অবশ্যই। এমন একটি বড় ইভেন্টে সবাই চায় ইম্প্যাক্টফুল ইভেন্ট খেলতে। আমার মনে হয়, আমিও ব্যতিক্রম নই। তবে কন্ডিশন একটা চ্যালেঞ্জ থাকবে, প্রতিপক্ষ একটা চ্যালেঞ্জ থাকবে। মাঠে প্রচুর দর্শক থাকবে। সব কিছু মিলিয়ে এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ চতুর্থবারের মতো আমি খেলতে যাচ্ছি। শেষ তিনটি বিশ্বকাপে আমি রান করেছি, আমার নিজেরও একটা ব্যক্তিগত লক্ষ্য আছে। এই বিশ্বকাপে যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারি। আমি মনে করি সুযোগ আছে, সামর্থ্যও আছে। আমি সেভাবেই চেস্টা করব। একজন টপ অর্ডার হিসেবে মনে হয়, আমাদের যারাই টপ অর্ডার আছে তাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ যারা টপ অর্ডার আছে স্পেশালি ওয়ানডে ফরম্যাটে টপ অর্ডার রান করলে অনেক বড় একটা রান স্কোর বোর্ডে তুলতে পারেন, প্রায় ৩শ’ বা সাড়ে ৩শ’। এই বিষয়গুলো আমার মাথায় আছে এবং অ্যাজ অ্যা টিম আমরা এগুলো আলোচনা করেছি। যদি সুযোগ থাকে তাহলে চেস্টা করব বাংলাদেশকে দু’হাত ভরে দিতে।’
ইংল্যান্ডের কন্ডিশন নিয়ে ব্যাটসম্যানরা বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন বলেও জানান মুশফিক। তিনি বলেন, ‘স্ট্রাইক রেটটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কত রান করলেন, গড়ে কত রান করলেন, তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্ট্রাইক রেট। আপনি যদি দেখেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা ৩২০ এর মতন করেও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গেছি। এটাই প্রমাণ করে যে ওই উইকেটে আমাদের ৩৫০-৩৬০ রান করা উচিত ছিল। আমরা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা সেটাই চিন্তা করছি। আমরা যদি ১০০ করি, সেটাকে কিভাবে ১৩০-১৫০ এ নিয়ে যাওয়া যায় এবং কত দ্রুত সময়ে নিয়ে যাওয়া যায়। শুধু বাউন্ডারি না, মাঠ গুলো হয়তো বড় হবে, তাই আপনার রানিং বিটউইন দ্য উইকেটও গুরুত্বপূর্ণ।’
আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বাঁধা কোন দল হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মুশফিক বলেন, ‘যে কোনো দল। আফগানিস্তানও শক্তিশালী দল। ভারত-পাকিস্তান বা অন্য যে কোনো দলই শক্তিশালী। আবার আমরা ভালো খেললে যে কোনো দলকেই হারানো যাবে। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্দিষ্ট দিনে সব বিভাগে আমরা কি করছি। আমাদের পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতাটা অব্যাহত রাখতে হবে। তার আগে আয়ারল্যান্ডে আমাদের ভালো সুযোগ আছে। সেখানে আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভালো দল। তাদের বিপক্ষে আমাদের ভালো খেলতে হবে। এরপর অনুশীলন ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষেও আমরা সুযোগ পাবো। সব মিলিয়ে আমরা কোনো দলকেই ছোট করে দেখার সুযোগ দেখছি না।’
আসন্ন বিশ্বকাপে মনে মনে ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন মুশফিক, ‘লক্ষ্য তো সবারই থাকে। আমারও আছে। বাকিটা উপরওয়ালার ইচ্ছা।’
২০০৭ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপের স্মৃতি নিয়ে রোমাঞ্চিত মুশফিক।
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালের পুরোটা আসলে ঘোরের মধ্যেই ছিলাম। কখন যাবো কখন খেলব, বয়সে তরুণ ছিলাম। এত বড় মঞ্চ, আর গ্রেট গ্রেট খেলোয়াড় ছিল তখন। শচিন টেন্ডুলকার-ব্রায়ান লারা-পন্টিং, তাদের সাথে খেলা, যাদের টিভিতে দেখেছি তাদের সাথে খেলা, এগুলো নিয়ে অনেক অনেক রোমাঞ্চিত ছিলাম। তবে এখন যারা খেলছে ওরা অনেক অভিজ্ঞ। রাহি ছাড়া বাকিরা বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো একটু হলেও কাজে দিবে। উপভোগ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট শুধুমাত্র একটা খেলা, এই মানসিকতা নিয়ে যাওয়া ও ১০০% দেয়া, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’
এটাই কি বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বকাপ দল কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে মুশফিক বলেন, ‘অভিজ্ঞতার কথা বললে বলবো যে, হ্যা অবশ্যই শক্তিশালী দল। হয়তো বা ওই রকম না হলেও আমার কাছে মনে হয় এটাই অভিজ্ঞ দল। গত কয়েক বছরে খুব কাছে গিয়েও হেরে গিয়েছি। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা হয়তো বড় কিছু আমাদের জন্য রেখে দিয়েছেন।’
বিশ্বকাপে বড় ইনিংস খেলে আসরটিকে ব্যক্তিগতভাবে স্মরণীয় করে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন মুশফিক, ‘মাইলস্টোন সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের টপ অর্ডারে যারা আছে, সবাই চেষ্টা করে বড় ইনিংস খেলার। আমিও করি। আর আমি সব সময় বিশ্বাস করি ম্যাচ জেতানোর ক্ষেত্রে যে রানটা দরকার, আমি সেটাই করতে চাই। বড় ইনিংস খেলার সুযোগ এলে আমি তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। বড় কিছু করার জন্য, স্মরণীয় কিছু করার জন্য চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না।’
বাসস/এএমটি/২০০৫/মোজা/স্বব