ভোলার বাংলাবাজারে বিদেশী কবুতর খামারে যুবকের সফলতা

470

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : জেলার দৌলতখান উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় বিদেশী কবুতরের খামারে সফলতা অর্জন করেছেন মীর মো. মেহেদী হাসান (২৫) নামের এক যুবক। বাসার ছাদে বিদেশী নানান প্রজতির ১শ’ ৫০ জোড়া কবুতর নিয়ে গড়ে তুলেছেন মীর পিজন লফট। ¯œাতক সম্পন্ন করা মেহেদীর বর্তমানে মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকে। কোন মাসে এর চেয়ে বেশি আয় হয়।
কঠোর পরিশ্রম ও কবুতরের প্রতি নিবিড় ভালোবাসা শিক্ষিত এ যুবককে সফলতা এনে দিয়েছে। তার এখানে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু লাখ টাকা দামের পর্যন্ত কবুতর রয়েছে। মেহেদীর দেখা দেখি অনেকেই কবুতর পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বাংলাবাজারে তার কাছ থেকে কবুতর কিনে একটি কবুতরের দোকান করা হয়েছে। তার থেকে পরামর্শ নিয়ে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ কবুতর পালন শুরু করেছেন।
সরেজমিনে বাংলাবাজার এলাকায় মেহেদির বাসভবনের দোতলায় খামারে গিয়ে দেখা যায় কবুতরের পরিচর্যায় ব্যস্ত। লোহার গ্রিল চারপাশে ও উপরে টিন শেড দেওয়া হয়েছে খামারে। খাঁচার মধ্যে শোভা পাচ্ছে বিভিন্নরকম কবুতর। বাসস’র সাথে আলাপকালে মেহেদী বলেন, ২০১৭ সালে ¯œাতক শেষ করে শখের বসে ২০ জোড়া কবুতর নিয়ে খামার শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই কবুতরের প্রতি রয়েছে গভীর ভালোবাসা ও মমতা। ফেইজবুকে খামারের নামে একটি পেইজ চালু করি। তখন দেখলাম বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ২ বছরে খামার সম্প্রসারণ করে কবুতরের সংখ্যা বৃদ্ধি করি। তার এখানকার উৎপাদিত কবুতরের বাচ্চা অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ভোলা, বরিশাল, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
খামারে বিভিন্ন জাতের কবুতরের মধ্যে ১ লাখ টাকা মূল্যের আরএসপি কোএলমোন্ড জাতের কবুতর রয়েছে, যার প্রতি জোড়া বাচ্চার মূল্য ৪০ হাজার টাকা। রয়েছে ৪০ হাজার টাকা দামের লাহরী (লাল), এর বাচ্চার দাম ১৫ হাজার। বোখরা হোয়াইট টব কবুতর, যার দাম (প্রাপ্তবয়স্ক) জোড়া প্রতি বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকা, আর বাচ্চার দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
এছাড়া আরএসপি পোর্টার (ব্লু) রয়েছে ৩০ হাজার টাকা দামের, এগুলোর বাচ্চা বিক্রি হয় ৮ হাজার টাকায়। এছাড়া পূর্ণ বয়স্ক ডেনিস (সাদা) জোড়া বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকা, ডেনিস (হলুদ) ১৫ হাজার, হাউস পিজন ১২ হাজার, ১০ হাজার টাকার কোকা বাসিরাজসহ বিভিন্ন জতের আকর্ষণীয় রঙের কবুতর রয়েছে। এছাড়া পেনসিল পোর্টার, হেনা পোর্টার, কুমারিয়ান, উলো মালটেসসহ ৩০ প্রজাতির বেশি কবুতর রয়েছে মেহেদীর খামারে।
কবুতর প্রেমী মেহেদী আরো বলেন, কবুতর পালনে তেমন একটা পরিশ্রম করতে হয় না। সকাল-বিকেল ২ ঘন্টা করে মোট ৪ ঘন্টা সময় দিলেই হয়। এসব কতুরকে ধান, গম, চিনা, এংরা, ডাবলিসহ প্রায় ১৫ ধরনের খাবার মিশিয়ে দিতে হয়। দৈনিক তার ১ হাজার টাকার খাবার দিতে হয়। কবুতরের তেমন রোগ বালাই হয়না। আর রোগ হলে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে চিকিৎসা সর্ম্পকে জানা যায়। একইসাথে ফেইজবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে রোগের সমাধান পাওয়া যায়।
বাংলাবাজার এলাকায় মেহেদীর থেকে কবুতর নিয়ে দোকান দিয়েছেন মো: ফয়সাল। তিনি বলেন, এ এলাকায় দেশি কবুতরের চাহিদা থাকলেও বিদেশীর তেমন বাজার ছিলোনা। কিন্তু মেহেদীর খামারের সফলতা দেখে এখন অনেকেই উন্নত জাতের কবুতর ক্রয় করছেন। বর্তমানে এখানে সীমিত হলেও বিদেশী কবুতরের বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
কবুতর খামারের প্রধান সমস্যার কথা উল্লেখ করে খামারী মেহেদী বলেন, কবুতর বিদেশ থেকে আমদানী করা গেলেও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানী করা যায় না। তাই এর আরো সম্প্রসারণের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। একইসাথে আরো বৃহৎ পরিসরে খামার গড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন মেহেদীর।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল বাসস’কে বলেন, কবুতর পালন একটি শখের বিষয় হলেও তা বর্তমানে বেশ লাভজনক। এর মাধ্যমে বেকারত্ব দূরসহ বাড়তি আয়ের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের খামার করা একটি ভালো ব্যাপার। বর্তমানে জেলায় অনেকেই বিদেশী কবুতর পালন করছেন। আমাদের যুব সমাজকে যদি এ শিল্পের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তবে এ খাত আরো সমৃদ্ধ হবে। এ ব্যাপারে প্রাণী সম্পদের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।