বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (প্রথম কিস্তি) : কোন রাজনৈতিক দল ভাঙ্গা আমার নীতি নয় : প্রধানমন্ত্রী

569

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (প্রথম কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সংবাদ সম্মেলন-প্রশ্নোত্তর
কোন রাজনৈতিক দল ভাঙ্গা আমার নীতি নয় : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : বিরোধীদল থেকে নির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণের বিষয়ে কোন রকম চাপ সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনৈতিক বৈচিত্রের প্রয়োজনেই তিনি কোন রাজনৈতিক দল ভাঙ্গার নীতিতে বিশ্বাসী নন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিটি দলের স্বকীয়তা আছে, স্বাধীনতা আছে সিদ্ধান্ত নেবার এবং কোন দল ভেঙ্গে কিছু করা-এটা কিন্তু আমার নীতি নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা (বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের এমপিগণ) সে^চ্ছায় শপথ নিয়েই সংসদে এসেছে। সরকারের নয়, তারা তাদের ভোটারদের চাপেই শপথ নিয়েছেন। তারা সংসদে তাদের কথা বলবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সাম্প্রতিক ব্রুনেই সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
ব্রুনেই দারুস সালাম-এর সুলতান হাজী হাসানাল বল্কিয়া-এর আমন্ত্রণে গত ২১ থেকে ২৩-এ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সে দেশ সফর করেন।
ব্রুনেই সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হলেও এখানে সমকালিন রাজনীতি, খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসংগ, কলম্বোয় সাম্প্রতিক সিরিজ বোমা হামলাসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ,সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যাকান্ড, আন্দোলনের নামে বিএনপির অতীতের জ্বালাও-পোড়াও এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঘুরে ফিরে আসে এবং প্রতিটি প্রশ্নের অনুপুঙ্খ উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী দলভাঙ্গার প্রচলিত রাজনীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘প্রস্তাব আমরা অনেক পাই। তবে, এ বিষয়ে আমি সাংঘাতিকভাবে দ্বিমত করি, কারণ যার যার দল সে সে করবে। আর যারা (বিএনপি) এ ধরনের এজেন্সির মাধ্যমে তৈরি হয়েছে তাদেরকে ভাল চিনি। আশ্রয়টা সেখানেও চায় এবং ভাঙ্গতে বললে সেখানে ভাঙ্গাটাতো কোন ব্যাপারই না। আমরা কেন করতে যাব সেরকম।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট লোকবল আছে। আর নতুৃন লোকবলের দরকার নেই। আওয়ামী লীগ একই একশ’। দেশের জনগণের কল্যাণ করার জন্য আওয়ামী লীগই যথেষ্ট।’
এ সময় তিনি অতীতের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় তুলে ধরে বলেন,‘আমার মনে হয় দেশবাসীর ভাবা উচিত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত কিন্তু এ দেশের কোন উন্নতি হয়নি। কোন মানুষের উন্নতি হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘রাজনীতিতে পুনরুজ্জীবিত করাবার কোন বিষয় রয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আর খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয় নিয়ে যে প্রশ্ন এসেছে, তার উত্তরে আমি বলবো- প্যারোলের জন্য কিন্তু আবদেন করতে হয়। এ নিয়ে কিন্তু এখনো কেউ আবেদন করেনি। আর যেহেতু কেউ আবেদন করেনি তাই এ বিষয়ে আমাদের এখন বলার বা করার কিছু নেই।
এ সময় বিএনপি’র এক সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণ প্রসংগে তিনি বলেন, ‘এখানে সরকারের কোন চাপ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা (সংসদ সদসবৃন্দ) জনগণের ভোটে নির্বাচিত। কাজেই তাদের নিজস্ব আসনের জনগণের কাছেই তাদের চাপ রয়েছে। কেননা তারাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং চাপ দিয়েছে। ফলে সংসদেরা শপথ নিয়েছে এবং শপথ নিয়ে বলেছে যে, তারা সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কথা বলবে। আর একটা কথা মনে রাখতে হবে খালেদা জিয়াকে আমরা রাজনৈতিকভাবে গ্রেফতার করিনি।’
কৃষিমন্ত্রী এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং মৎস ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, মন্ত্রি পরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সংবাদ সংস্থার সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া তার দুর্নীতির কারণেই কোর্টের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত এবং সেই শাস্তি সে ভোগ করছে। আর সে মামলাটাও করে গিয়েছিল আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং মামলাটি চলেছে ১০ বছর। কাজেই এ মামলায় তাঁর সরকার কোনভাবেই কোন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেনি।
তিনি বলেন, কোর্টকে আমরা প্রভাবিত করি না, আদালত আদালতের মত চলে। তাঁরা শাস্তি দিয়েছে। সেই শাস্তিই এখন বেগম জিয়া ভোগ করছেন।
আজকে শিক্ষা-দীক্ষা সব দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি অতীতে দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিরাজমান সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে কি হত, গোলাগুলি ও বোমাবাজি। আমরাতো সেটাও বন্ধ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর ২টার পর কোন শ্রেণী কার্যক্রম চলতো না। এখনতো সন্ধ্যায়ও ক্লাশ হয়।
তিনি বলেন, ‘নুসরাতের বিষয়ে এটুকু বলবো কেউ অন্যায় করলে সে যেই হোক, আমিতো বলেই রেখেছি এ ধরনের অন্যায়ের ক্ষেত্রে তার কোন ক্ষমা নেই এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব এবং সেটাই নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি নুসরাতের বিষয়টি যদি তাৎক্ষণিকভাবে না ধরতাম তাহলে সব দোষ নুসরাতের ওপরই পড়তো। তাঁকেতো একটা চরিত্রহীন বানিয়ে ছেড়ে দিত (কতিপয় মিডিয়ার অতীত এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে)। সে কারণেই আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। তাছাড়া এ ধরনের অন্যায় এটা কখনও মেনে নেয়া যায় না। কাজেই এ ধরনের ঘটনা যারাই ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নেব। সে যেই হোক কোন ছাড়াছাড়ি নেই। আমার দল না কার দল কোনটা আমি দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গোপনে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটছে কি ন সে বিষয়েও তাঁর সরকার খোঁজ খবর করছে। কারণ এ ধরনের ঘটনা পুনরায় আমাদের দেশে ঘটুক তা আমরা চাই না।
চলবে-/বাসস/এএসজি-এফএন/২১৪৮/-জেহক