নওগাঁ’র বরেন্দ্র এলাকায় সোলার চালিত পাতকুয়া স্থাপন

443

নওগাঁ, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : কৃষি মন্ত্রাণলয়ের উদ্ভাবনে দেশের ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র এলাকাসমূহে “পাতকুয়া খননের মাধ্যমে পানীয় জল ও স্বল্পসেচে সবজি চাষ প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটি নওগাঁর সাপাহার বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এলাকায় পানীয় জল সমস্যা সমাধান ও স্বল্পসেচে সবজি চাষে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষের নওগাঁ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী শমসের আলী জানিয়েছেন দেশের বরেন্দ্র এলাকার নাচোল, গোমস্তাপুর, নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার ও পত্নী তলার কিছু অংশে মাটির নিচে বালির কোন লেয়ার না থাকায় সেখানে কোন গভীর নলকূপ/ অগভীর নলকূপ কিছুই বসেনা ফলে প্রতিবছর খরা মৌসুমে ওই সব এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় শাক সবজির সংকট দেখা দেয়। এসব এলাকার কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে তৎকালীন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বরেন্দ্র এলাকায় স্বল্পসেচে সবজি চাষসহ পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওই সব এলাকায় সংকট মোকাবেলায় সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। অবশেষে মন্ত্রণালয়ের সফল প্রচেষ্টা ও তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়নের লক্ষে বরেন্দ্র এলাকায় পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প সেচে শবজি চাষ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেণ। এর পর সাপাহার উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় স্বাপেক্ষে উপজেলায় ১১৫টি পাতকুয়া স্থাপনের জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের উপর এর দায়িত্বভার ন্যাস্ত করেন। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই উপজেলার পিছলডাঙ্গা, সিংগাহার, ধর্মপুর , বাহাপুর, বাসুল ডাঙ্গা, মদনশিং, ফুরকুটিডাঙ্গা, করলডাঙ্গাপাড়া, হরিপুর, তিলনাসহবেশ কয়েকটি গ্রামে শতাধিক পাতকুয়া খননের কাজ শুরু করে যা প্রায় সমাপ্ত হওয়ার পথে।
বর্তমান কৃষি মন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক এর উপদেশ ও সহযোগিতায় কুপগুলোর সিংহভাগ কাজ শেষ হয়ে অনেকেই এর সুপেয় পানি ব্যাবহার করে তার সুফল ভোগ করছেন এবং কিছু অংশে খনন কাজ অব্যহত রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। সাপাহার উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান যে, প্রতিটি পাতকুয়া মেশিনের মাধ্যমে ১শ’ থেকে ১৪০ফিট খনন করা হয়। এর পর ওই খননকৃত কুপে ৪৬ ইঞ্চি ব্যাসের সিমেন্ট বালি ও ইটের খোয়াদ্বারা নির্মিত রিং বসানো হয় এবং কুপের উপরে লোহার এঙ্গেল দিয়ে নির্মিত ৩২ফিট ব্যাসাধ্যের একটি ঢাকনা স্থাপন করা হয়ে থাকে। এর পর কুয়া হতে পানি উত্তোলনের জন্য ঢাকনার উপরিভাগে ২৫০ওয়ার্টের ১৬টি সোলার প্যানেল বসানো থাকে এছাড়া ঢাকনাটি এমন ভাবে বসানো হয় যাতে করে বৃষ্টির পানি ঢাকনা দিয়ে চুয়ে কুপের মধ্যে পড়তে পারে। যার ফলে সুফলভোগী ওই কৃষক কৃষাণীরা পানীয় জল সংগ্রহসহ সকাল ৯টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সোলারের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে তাদের শাক সবজিতে দিতে পারে। কুপগুলোতে কোন ব্যাটারী কিংবা বিদ্যুত সরবরাহ না থাকায় শুধু দিনের বেলায় প্যানেলের মাধ্যমে যত টুকু পানি কুপ হতে উত্তোলন করা হয় সারা রাতে তা আবার যেন পূর্বের লেয়ারে ফিরে আসতে পারে। বর্তমানে সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিনন্দন পাতকুয়াগুলো যেমন এলাকায় শোভাবর্ধন করছে ঠিক এলাকার সুফল ভোগীরা ও ওই কুপ হতে পানীয় জলের সমস্যা সমাধানসহ স্বল্প সেচে সবজি চাষ করে বেশ লাভের মুখ দেখছেন। মাটির নিচের সু-পেয় পানীয় জলের অভাবে যে এলাকার মানুষ একসময় পুকুরের পানি পান করত আবার অনেকে কষ্টে দু’একটি গ্রামে মানুষ গর্তের মধ্যে ঢুকে ৮০/৯০ফিট মাটির নিচে গিয়ে কোদাল দ্বারা কুয়া খনন করে পানীয় জলের সমস্যা মোকাবেলার চেষ্টা করত। অনেক সময় এধরণের কুয়া খনন করতে গিয়ে নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কারো কারো প্রাণ পর্যন্ত দিতে হতো। এখন সে এলাকাগুলোতে মেশিনের সাহায্যে সোলার চালিত পাতকুয়া স্থাপন করে সু-পেয় পানীয় জলের সমস্যা সমাধান এবং স্বল্পসেচে সবজি চাষ বরেন্দ্র এলাকায় এক উজ্বল দৃষ্টান্ত বলে এলাকার সুফল ভোগীরা মনে করছেন।