সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন : প্রধানমন্ত্রী

887

বন্দর সেরি বেগাবান, ব্রুনাই, ২১ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলংকায় ভয়াবহ বোমা হামলার তীব্র নিন্দা এবং এই সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আজ এখানে বক্তৃতায় বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোন বর্ণ, ধর্ম ও দেশ নেই। তারা সন্ত্রাসী এবং মানুষের জীবন ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং আমি তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় এখানে এম্পায়ার হোটেল এন্ড কান্ট্রি ক্লাবের ইন্দেরা সামুদেরা বলরুমে ব্রুনাই দারুসসালামে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের তাকে দেয়া এক গণসংবর্ধনায় বক্তব্য রাখছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শ্রীলংকার ৮টি স্থানে সংঘটিত বোমা হামলায় বহু লোক নিহত ও আহত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি এই বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা হলো শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মেয়ের পরিবার শ্রীলংকায় বোমা হামলার শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সেলিমের মেয়ে-জামাই ও নাতি এ সময় একটি রেস্টুরেন্টে খাচ্ছিলেন। সেখানে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে মেয়ে-জামাই আহত হন এবং আজ বিকেল পর্যন্ত নাতির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে নিউজিল্যান্ডেও এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে কেবল জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেনি, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সতর্ক রেখেছে। ‘আমরা সন্ত্রাসবাদীদের চিহ্নিত করা মাত্রই তাদের বিরুদ্ধে ত্বরিত পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ তিনি বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসবাদী, দুর্নীতিবাজ ও মাদকাসক্তদের ঠাঁই হবে না উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা জনগণের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত চক্রের আগুন হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের জঘন্য কর্মকান্ডে অনেক নিরীহ মানুষকে আগুনে পুড়ে হত্যা করা হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন সমাজে সে হামলার প্রভাব লক্ষ্য করছি। কিছু লোক এখন সে ধরনের নিষ্ঠুর কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও ব্রুনাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এ কে এম আহসান উল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসাইন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলী আশরাফ খান খসরু, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।
এর আগে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপকর্মের জন্য গত সাধারণ নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশে যেন এ ধরনের আগুন-সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য তিনি সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা খাদ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিবরণ দেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের একটি মানুষও ক্ষুধার্ত ও গৃহহীন থাকবে না, আর এটিই আমাদের সরকারের সিদ্ধান্ত।’ দেশের মানুষই তাঁর পরিবার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জীবনমান উন্নত করা তাঁর দায়িত্ব। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশপ্রেমের বোধ ও দায়িত্ব থেকে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের কল্যাণে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘চাকরি প্রার্থীরা যাতে তাদের জমি-জমা বিক্রি করার বদলে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারে সেজন্য আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘যেসব অঞ্চলে জনসংখ্যা বেশি সেখানে এই ব্যাংকের শাখা খোলা হবে।’
তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতারণা রোধে তাঁর সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করতে যাচ্ছে। তবে শেখ হাসিনা শ্রমিকদের কোনো প্রকার প্রতারণার শিকার না হওয়ার জন্য নিজ থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।