বাসস দেশ-১ : বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়তে ডব্লিউটিও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে

262

বাসস দেশ-১
মুখ্যসচিব-ইউএন-সুপারিশ
বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়তে ডব্লিউটিও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই একটি সার্বজনীন, নীতি-ভিত্তিক, উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, প্রত্যাশিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন এবং ন্যায়সঙ্গত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ইকোসকের উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) ফোরামের শেষ দিন (১৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত থিমেটিক প্যানেল আলোচনায় অন্যতম প্যানেলিস্ট হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নিয়ে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার জন্য এই সুপারিশ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় একথা বলা হয়।
বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বিনির্মাণ বিষয়ক এই উচ্চ পর্যায়ের থিমেটিক আলোচনায় মুখ্য সচিবের সাথে প্যানেলিস্ট হিসেবে ছিলেন আইটিইউ-এর রেগুলেটরি এন্ড মার্কেটিং এনভায়রনমেন্ট ডিভিশনের প্রধান মিজ্ সোফিয়ে ম্যাডেনস্ এবং আঙ্কটাড-এর গ্লোবাল এন্ড রিজিওনাল ট্রেড অ্যানালাইসিস সেকশন-এর প্রধান মিজ্ মিহো শিরোতরি।
টেকসই উন্নয়ন অর্জনে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়, বাণিজ্যের সুবিধার সমবন্টন কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, ই-কমার্সসহ প্রযুক্তির উদীয়মান ধারা বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে এবং এলডিসির দেশসমূহের বিশ্ব বাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কী ধরনের নীতি বাস্তবায়িত হতে পারে- থিমেটিক আলোচনায় এসব প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানসহ অন্যান্য আলোচকগণ।
মো: নজিবুর রহমান বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার বিষয়ে সুপারিশে বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার চলতি চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করা এবং বাণিজ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা বিশ্বব্যাংকের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়। এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যাতে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের একটি বড় নিয়ামকে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বাঁধা, বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করার ক্ষেত্রে ভর্তুকি এবং অন্যান্য বাণিজ্য ক্ষতির পদক্ষেপসমূহকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।
নজিবুর বলেন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার পদ্ধতিগত ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য গৃহীত ‘দোহা ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা’র আলোচনা সমাপ্ত করতে হবে।
ডিজিটাল প্লাটফর্ম এবং আর্থিক-প্রযুক্তি এমএসএমই-এর বাণিজ্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে কার্যকর একটি ব্যবস্থা হতে পারে সুপারিশ করে তিনি আরও বলেন, সক্ষমতা বিনির্মাণ, বৈচিত্র সৃষ্টি, মূল্য সংযোজন এবং বৈশ্বিক মূল্য চেইনে সমন্বয় আনতে বাণিজ্য অগ্রসরতায় সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে।
ই-কর্মাস, ডিজিটাল ইকোনমি ও প্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ে মুখ্য সচিব বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইকোনমিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ই-কর্মাসের সম্ভাবনাগুলোর পূর্ণ ব্যবহারে শেখ হাসিনা সরকার একটি ডিজিটাল সোসাইটি বিনির্মাণ করেছে।”
তিনি বলেন, “সরকারের এসকল পদক্ষেপের ফলেই আমরা ‘প্রযুক্তি-নির্ভর ও দক্ষতা ভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে পেরেছি।”
‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো, বাণিজ্য সরবরাহ, পেমেন্ট ব্যবস্থা, আইন ও প্রবিধান, দক্ষতা এবং অর্থায়নের উন্নয়নের মাধ্যমে ই-কমার্সকে ত্বরান্বিত করে এর সুবিধা অর্থনীতিতে ছড়িয়ে দিয়েছে’ বলে আন্কটাড এর ই-ট্রেডিং রেডিনেস অ্যাসেস্মেন্ট প্রদত্ত স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করেন মুখ্য সচিব।
‘ই-কর্মাস এর অগ্রযাত্রা উন্নয়নশীল দেশে শুরু হয়েছে’ একথা উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, “ই-কমার্সের সুবিধাগুলো ঘরে তুলতে, এর ঝুঁকি মোকাবিলা করতে এবং এর প্রতি জনগণের আস্থা সৃষ্টি করতে ‘ইকোসিস্টেম দৃষ্টিকোন’ থেকে আমাদেরকে বাণিজ্য বাধাসমূহ ভেঙ্গে ফেলতে হবে। নতুন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেমন অটোমেশন, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বিষয়গুলো ই-কর্মাস প্রসারের সাথে সংযুক্ত করতে হবে কারণ বিশ্বের অনেক দেশ এখনও দ্বিতীয় বা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের স্তরে রয়েছে”।
তিনি উন্নয়নশীল দেশ বা স্বল্পোন্নত দেশ উভয়ের জন্যই এসকল ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষসমূহের অভীষ্ট ১৭.১২ এর কথা উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, “এর পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে”।
উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে মুখ্য সচিব আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোর উপর জোর দেন। এক্ষেত্রে তিনি বিবিএনজি (বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত ও নেপাল) এবং বিসিআইএম (বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার) সহযোগিতা কাঠামোর কথা উল্লেখ করেন।
প্যানেল আলোচনায় এবং উপস্থিত অংশীজনদের প্রশ্ন ও মতামতে উঠে আসে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নানা উদাহরণ, যা ছিল এই থিমেটিক আলোচনার অন্যতম একটি লক্ষণীয় বিষয়।
১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া ৪র্থ এফএফডি ফোরামের এই অধিবেশন আন্তরাষ্ট্রীয় আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত আউটকাম ডকুমেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বাসস/সবি/এমএন/১১১৫/শআ