দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ পর্যালোচনা অব্যাহত রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

1027

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে দেশব্যাপী সচেতনতা কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপসমূহ অব্যাহত পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের (এনডিএমসি) বৈঠকে তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবেলার জন্য সরকারের উদ্যোগ অব্যাহতভাবে পর্যালোচনা এবং করণীয় বিষয় নির্ধারণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনতে যথাসময় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একইসাথে দেশব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম চালাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি পাশাপাশি দুর্যোগের ক্ষতি ন্যূনতম মাত্রায় কমিয়ে আনতে জাতীয়, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তি পর্যায় থেকে যথাসময়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এনডিএমসি’তে মন্ত্রীবৃন্দ, সিনিয়র বেসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণসহ সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা এজেন্সিসমূহের প্রধানগণ রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ মোকাবেলায় কি ব্যবস্থা নিতে হবে সে বিষয় সকলকে অবহিত করতে সরকারের দুর্যোগ সম্পর্কিত নির্দেশনা প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
বন্যা এবং অন্যান্য সকল ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে জনগণের ভোগান্তি ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনতে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সকল স্টেকহোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সকলকে বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য মনে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন বিপর্যয়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ন্যূনতম পর্যায়ে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহনের ধারণার মধ্যেই আমাদের থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা সম্প্রতি রাজধানীতে এফআর টাওয়ার এবং চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডে অনেক মানুষের প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন হয়েছে, তেমনি অগ্নিকান্ডের মতো দুর্ঘটনাও বাড়ছে।
তিনি বলেন, যখনই কোন দুর্ঘটনার খবর আসে তাঁর সরকার অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দেয়, জীবনহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা করে। পূর্ববর্তী সরকারগুলো থেকে এই উদ্যোগ ব্যতিক্রমী।
শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সরকারি সব অফিস এবং আওয়ামী লীগ কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কাছে খাদ্য, ওষুধ এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে।

তিনি স্মরণ করেন যে, ১৯৯১ সালে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর ওই সময় বিএনপি সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকার উপকূলীয় অঞ্চলকে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষায় ‘মুজিব কিল্লা’ নামে ১ হাজার সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর সূফল লক্ষ্য করা যায় ১৯৯৮ সালে দীর্ঘস্থায়ী ভয়াবহ বন্যায় যখন ঢাকা মহানগরীরও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল। ওই সময় এ পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছিল যে বন্যায় ২ কোটি মানুষ মারা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা ও জনগণের দুর্যোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য স্বেচ্ছাসেবী তৈরি করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও বন্যাকবলিত মানুষসহ সকলের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যায় পলিসহ অন্যান্য উপাদানও আসে। যা চাষের জমিকে আরো উর্বর করে।
তিনি বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ ব্যবহারে জনগণকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, আধুনিকায়ন আমাদের অনেক আরাম দিয়েছে। তবে এতে ঝুঁকিও কম নয়। এজন্য আধুনিকায়নের ঝুঁকি এড়াতে আমাদের সতর্ক হতে হবে।
শেখ হাসিনা জনগণকে সবসময় সতর্ক থাকতে এবং বাসা-বাড়ি ও কর্মস্থল যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলার উপযোগী করে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই সময়কার সরকার দুর্যোগের ব্যাপারে সতর্ক ছিল না বলেই হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
তিনি তাঁর সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সফলভাবে মোকাবেলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার কারণে ওই সময় তিনি তাঁর স্পেন সফর বাতিল করেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামী দিনে দুর্যোগ মোকাবেলায় সময়োপযোগী প্রস্তুতি নিতে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিষদকে নির্দেশ দেন।