বশিরের উচ্ছেদের এক সপ্তাহ পরও সুদানে ‘বিপ্লব’ অসম্পূর্ণ

245

খার্তুম, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস ডেস্ক) : সুদানে বৃহস্পতিবার দেশটির ৩০ বছরের শাসক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের উচ্ছেদের এক সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে। বশিরের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের পর সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তবে বিক্ষোভকারীরা এবার নতুন সামরিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। ফলে বিপ্লব অসমাপ্তই রয়ে গেছে।
বিক্ষোভকারীরা খার্তুমের মধ্যাঞ্চলের সেনা সদরদপ্তরের বাইরে একটানা অবস্থা করে বিক্ষোভ করে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর দাবির প্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল সেনাবাহিনী বশিরকে উচ্ছেদ করে।
খার্তুমের প্রকৌশলী তারিক আহমেদ (২৮) বলেন, ‘বশিরের শাসন আমল ছাড়া এটিই আমার জীবনের প্রথম সপ্তাহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রজন্ম এই স্বৈরশাসককে হটাতে পেরেছে বলে আমি গর্বিত।’
৭৫ বছর বয়সী বশির ১৯৮৯ সালে ইসলামপন্থী সমর্থিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি অত্যন্ত নির্মমতার সঙ্গে তিন দশক দেশ শাসন করেন।
তার শাসনামলে দেশব্যাপী সংঘাত সংঘর্ষ লেগেই থাকত। তার আমলেই দক্ষিণ সুদান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি এখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।
এছাড়া তার শাসনামলে গ্রেফতার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিরোধী দলীয় নেতা, কর্মী ও সাংবাদিকদের প্রায়ই গ্রেফতার করা হত।
১৯ ডিসেম্বর রুটির দাম তিনগুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে এটি দ্রুত দেশব্যাপী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
শহর ও গ্রামগুলো স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা ‘মুক্তি, শান্তি, ন্যায়বিচার’, ‘শুধু সরকারের পতন চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
দারফুর সংঘাতের ঘটনায় বশিরের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
তবে বশিরকে আটকের পরও সেনাবাহিনী তাকে হেগে’র কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে।
তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে তাকে রাজধানীর কোবের কারাগারে পাঠানো হয়।
বশিরের উচ্ছেদের সাত দিন পূর্ণ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এখন তার স্থালাভিষিক্ত হওয়া সামরিক পরিষদের অপসারণ চাইছে।
তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আওয়াদ ইবনে ওউফ পরিষদের প্রধান হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তবে জনতার চাপের মুখে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকেও উচ্ছেদ করা হয়।
এখন পরিষদের প্রধান হিসেবে প্রবীণ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহানকে নিয়োগ করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর লোক হলেও তিনি সেনাবাহিনীর বাইরের জগতেও ব্যাপকভাবে পরিচিত।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা একটি যৌথ সামরিক -বেসামরিক পরিষদ গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু গঠন করা হয়েছে সম্পূর্ণ সামরিক পরিষদ। এই পরিষদে বশির সরকারের অনেকেই আছেন।
সুদানিজ প্রফেশনালস অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ নেতা মোহাম্মদ নাজি বলেন, ‘আমরা এই সামরিক পরিষদের বিলুপ্তি ঘটিয়ে এর স্থলে বেসামরিক পরিষদ চাই, যেখানে সামরিক প্রতিনিধিরাও থাকবেন। সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি পরিষদ চাই আমরা।’
বিক্ষোভের আয়োজকরা বলেন, এই বেসামরিক পরিষদই চার বছরের বেসামরিক সরকারের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করবে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক অ্যালেন বসওয়েল বলেন, ‘এটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে এই বিপ্লব এখনো শেষ হয়ে যায়নি।’
বশির ও তার পরবর্তী উত্তরসূরি ইবনে ওউফের অপসারণের পর জাতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা (এনআইএসএস) এর প্রধান সালাহ গোস পদত্যাগ করেছেন।
তিনি বিক্ষোভ দমনের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় ৬০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী প্রাণ হারায়, কয়েকশ আহত হয় এবং হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে কারাগারে আটক করা হয়।
উদ্বুত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে সাথে নিয়ে একটি ‘ব্যাপক ও বিস্তারিত আলোচনার’ আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে সোমবার ৫৫ সদস্যরাষ্ট্র বিশিষ্ট আফ্রিকান ইউনিয়ন সামরিক বাহিনী ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষমতা বেসামরিকদের হাতে হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হলে সুদানকে জোট থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছে।