সিটির কাছে হেরেও সেমিফাইনালে টটেনহ্যাম

262

ম্যানচেস্টার, ১৮ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : এ্যাওয়ে গোলের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ৪-৩ ব্যবধানে পরাজিত হয়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে টটেনহ্যাম হটস্পার। প্রথম লেগে টটেনহ্যাম ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জয়ী হয়েছিল। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে এই পরাজয়ের ফলে ম্যানচেস্টার সিটির অভূতপূর্ব কোয়াড্রাপল (চার শিরোপা) ট্রফি জয়ের স্বপ্নও শেষ হয়ে গেছে। সেমিফাইনালে টটেনহ্যামের প্রতিপক্ষ এবারের টুর্নামেন্টের জায়ান্ট কিলার ডাচ ক্লাব আয়াক্স।
তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে প্রথম ১১ মিনিটের মধ্যেই চার গোল হয়েছে। রাহিম স্টার্লিংয়ের গোলে সিটিজেনরা এগিয়ে যাবার পর দক্ষিণ কোরীয় তারকা সং হেয়াং-মিন দুই গোল করে টটেনহ্যামকে এগিয়ে দেন। এরপর বার্নার্ডো সিলভা সিটির পক্ষে সমতা ফেরান। ২১ মিনিটে স্টার্লিংয়ের দ্বিতীয় গোলে সিটি দুই লেগ মিলিয়ে নিজেদের সমতায় ফেরায়। দ্বিতীয়ার্ধে সার্জিও এগুয়েরোর গোলে পেপ গার্দিওলার দল ৪-২ গোলে এগিয়ে গিয়ে প্রথমবারের মত লিড পায়। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি। ম্যাচ শেষের ১৭ মিনিট আগে ফার্নান্ডো লোরেন্তের বিতর্কিত গোলে টটেনহ্যাম ম্যাচে ফিরে আসে। যদিও ভিএআর প্রযুক্তিতে নিশ্চিতভাবে দেখা গেছে বলটি স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড লোরেন্তের হাত স্পর্শ করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলটি বাতিল না হওয়ায় ম্যাচে ৪-৩ গোলে পরাজিত হয়েও দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪’এর সমতায় এ্যাওয়ে গোলের সুবাদে টটেনহ্যাম সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে।
স্টপেজ টাইমেও আরো একবার ভিএরআর স্পারসদের জন্য ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। স্টার্লিং তার হ্যাটট্রিক পূরণ করলেও ভিএআর দেখিয়ে দিয়েছে এগুয়েরোর পজিশন অফ-সাইডে ছিল।
সিটির কোচ হিসেবে এই নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে খালি হাতে বিদায় নিতে হলো গার্দিওলাকে। যে কারনে ইতোমধ্যেই গার্দিওলার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তারপরেও প্রথম লেগের সমালোচনাকে তিনি গতকাল উত্তেজনায় ঠাসা ৯০ মিনিটে কিছুটা হলেও জবাব তিনি সক্ষম হয়েছেন। প্রথম লেগের থেকে চারটি পরিবর্তন করে কাল দল সাজিয়েছিলেন গার্দিওলা। কেভিন ডি ব্রুইনা মূল একাদশে ফিরেছেন। শুরু থেকেই বেলজিয়ান এই তারকা প্রমাণ করেছেন গত সপ্তাহে তাকে মূল একাদশের বাইরে রাখার সিদ্ধান্তটা কতটা ভুল ছিল। ৪ মিনিটে স্পারস রক্ষণভাগের মধ্য দিয়ে ডি ব্রুইনার বাড়ানো দারুন একটি পাস থেকে স্টার্লিং গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয়ান আসরের একটি দারুণ শুরুতে গার্দিওলাও সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে গোলটি উদযাপনের আহবান জানান। যদিও খুব বেশীক্ষন এই লিড ধরে রাখতে পারেনি সিটিজেনরা। ৭ মিনিটে অমারিক লাপোর্তে ও ডেলে আলির সহায়তায় সংয়ের শক্তিশালী শট আটকানোর সামর্থ্য ছিলনা এডারসনের। তিন মিনিট পর লুকাস মৌরার নিঁখুত পাসে সংয়ের কার্লিং শট আবারো এডারসনকে পরাস্ত করে। মৌসুমে এটি সংয়ের ২০তম গোল। টটেনহ্যামকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখার সাথে সাথে সং আরো একবার প্রমাণ করলেন হ্যারি কেনকে ছাড়া তার ওপরও পুরোপুরি আস্থা রাখা যায়। যদিও পরের মিনিটেই বার্নার্ডোর শট পোস্টের খুব কাছ থেকে হুগো লোরিস ধরতে ব্যর্থ হলে সিটিজেনরা ম্যাচে ফিরে আসে। ২১ মিনিটে বার্নার্ডো ও ডি ব্রুইনার এসিস্টে স্টার্লিং সিটির পক্ষে তৃতীয় গোলটি করেন। ৪১ মিনিটে ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার মৌসা সিসোকো ইনজুরির কারণে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হলে স্পারসদের এ্যাওয়ে গোলের স্বপ্ন কিছুক্ষনের জন্য হলেও শেষ যায়।
এ সময় স্পারস কোচ মরিসিও পোচেত্তিনো রক্ষণভাগের তুলনায় আক্রমনভাগকে শক্ত করার প্রায়সে সিসোকোর স্থানে লোরেন্তেকে মাঠে নামান। আর পোচেত্তিনোর এই আস্থার প্রতিদান শেষ পর্যন্ত দিয়েছেন স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ড। ৫৯ মিনিটে ডি ব্রুইনার হ্যাটট্রিক এসিস্টে আর্জেন্টাইন তারকা এগুয়েরো সিটিজেনদের শেষ পর্যন্ত এগিয়ে দিতে সমর্থ হন। যদিও কিয়েরান ট্রিপারের কর্ণার থেকে লোরেন্তের গোলে টটেনহ্যামের শেষ চার নিশ্চিত হয়। তবে গোলের আগে বলটি লোরেন্তের হাতে লেগেছিল কিনা তা যাচাই করতে ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। সেখানে স্পষ্টভাবে হ্যান্ডবলের বিষয়টি দেখা গেলেও তুরষ্কের রেফারি কানিয়েট কাকির তার গোলের সিদ্ধান্তেই অটুট ছিলেন।