দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি গঠনমূলক কাজে অবদান রাখবে তরুণ প্রজন্ম : রাষ্ট্রপতি

214

ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি গঠনমূলক কাজে অবদান রাখবে।
১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে আজ এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’
ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে দেশবাসী এবং প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপন তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
‘মুজিবনগর দিবস’ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন উল্লেখ করে তিনি এদিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কারাবাসকালীন মুজিবনগর সরকার পরিচালনাকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক-সংগঠকসহ যারা মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন সেইসব আপামর জনগণকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন।
মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনসহ পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। যার পুরোভাগে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু জাতির আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৬ মার্চ ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারীর মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে মুজিবনগর সরকার শপথ নেয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যাত্রা শুরু করে।’
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, বিশ্বদরবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানোসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় এ সরকার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। মুজিবনগর সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব, সঠিক দিকনির্দেশনা ও রণকৌশল মুক্তিযুদ্ধকে সফল পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় কাক্সিক্ষত বিজয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির নিজ বাড়িতে সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। তাঁর সে স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে নিরবছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে বৃহৎ প্রকল্প পদ্মাসেতু নির্মিত হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। সরকার বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে সক্ষম হবো।’
রাষ্ট্রপতি মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।