১২১ শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুকে বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস প্রদান

782

ঢাকা, ৯ জুন ২০১৮ (বাসস) : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উদ্যোগে ১২১ শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যের কানে শোনার কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে।
আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লকের অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিশুদের মাঝে এই কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বরাদ্দপত্র প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও প্রযুক্তি, যোগাযোগ, কৃষি, পরিবেশসহ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর পক্ষ থেকে ঈদের আগে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এই ডিভাইস একটি বিশেষ উপহার।
তিনি বলেন, ‘শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা কানে শুনতে না পাওয়ায় তারা কথাও বলতে পারে না। এসব শিশুদের বাবা ও মায়েরা কোনোদিন তাদের প্রিয় সন্তানের মুখে মা ও বাবা ডাক শুনতে পায় না। তবে আশা কথা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক সদিচ্ছা ও সহযোগিতায় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন কর্মসূচি কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম বিএসএমএমইউ’র উদ্যোগে বর্তমানে দেশের শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা কানে শুনতে ও কথা বলতে পারছে। ফলে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুসহ শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা বোঝা না থেকে দেশ ও সমাজের সম্পদ ও জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছে।’
উপাচার্য জানান, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র বা ডিভাইস, এর প্রতিটির মূল্য ক্ষেত্র বিশেষে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা। কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারির পর শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা যাতে আরো সুন্দরভাবে ভাষা শিখতে পারে সেজন্য অডিওলজি বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স চালু এবং নাক কান গলা বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ সকল ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা প্রদান করা হবে।
কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বরাদ্দ কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়লে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম-এর কর্মসূচী পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল হাসনাত জোয়ারদার।
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. আবুল হাসনাত জোয়ারদার বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩২৪ শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুকে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট-এর বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ২৯ জনের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যারা নিজেরাই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেছে। সব মিলিয়ে ৩৫৩ শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুকে এই সেবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ২২৮ জনের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস প্রতিস্থাপন বা কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করা সম্ভব হয়েছে এবং তাদের কথা বলা শেখানো হচ্ছে ও এক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা ও কথা শেখানোর ক্ষেত্রে সফলতার হার শতভাগ। সরকারী ব্যয়ে ইমপ্লান্ট পাওয়া ২০৩ জন এর মধ্যে ১৯৯ জন শ্রবণ প্রতিবন্ধীকে সার্জারী করা হয়েছে। এ কর্মসূচীর পাশাপাশি পরিবারের নিজ খরচে ইমপ্লান্ট ক্রয় করা ২৯ জন শ্রবণ প্রতিবন্ধীকে সফলভাবে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারী করা হয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯.৬ ভাগ মানুষ প্রতিবন্ধী ধরণের বধিরতা এবং ১.২ ভাগ মানুষ মারাত্মক ধরণের শ্রবণ প্রতিবন্ধিতায় ভোগেন। সম্পূর্ণ বধির শিশু, ব্যক্তি যে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেও কানে শুনতে পারে না- তাকে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করলে সে কানে শুনতে পারে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র।