অবকাঠামো খাতের কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যত উজ্জ্বল

467

ঢাকা, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : দেশে অবকাঠামো উন্নয়ননের জোয়ার চলছে। বড় বড় সেতু নির্মাণ, দুই লেনের সড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীত করাসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আরো অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছে। এসব প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ সিমেন্ট, রডসহ নির্মাণ সামগ্রীর প্রয়োজন হবে। এ কারণে অবকাঠামো খাতের সঙ্গে জড়িত কোম্পানি বিশেষ করে সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্পের কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল।
বর্তমানে সরকারিভাবে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কিন্তু ১০ বছর আগেও এই চিত্র ছিল ভিন্ন। কারণ অবকাঠামো খাতের বেশিরভাগ আসত ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মাণ থেকে। তবে বাংলাদেশের জনগনের মানুষিকতার পরিবর্তন এসেছে। সবাই পাকা বা সেমি পাকা বাড়ি নির্মাণ করতে চায়। আর এর জন্য মূল উপাদান সিমেন্ট ও স্টিল।উভয় পণ্যের চাহিদা দ্রুত গতিতে বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। সুতরাং সিমেন্ট ও স্টিল খাত বা অবকাঠামো খাতে উজ্জ¦ল সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে।
অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত ‘পুঁজিবাজারের অবকাঠামো খাতের কোম্পানি: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন এই খাতের শীর্ষ নির্বাহী ও বিশেষজ্ঞরা। আজ শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ক প্রথম অনলাইন পত্রিকা অর্থসূচক তিনদিনব্যাপী এই এক্সপোর আয়োজন করে। গত বৃহস্পতিবার এক্সপোটি শুরু হয়ে আজ রাত ৮টায় শেষ হয়।
আজকের প্রথম সেমিনারটিতে সভাপতি ছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড সিকিউরিটিসের পরিচালক মাহফুজুর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ক্রাউন সিমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ খান, এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেসের পরিচালক মো. রেজাউর রহমান,জিপিএইচ ইস্পাতের নির্বাহী পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক এফসিএমএ ও বসুন্ধরা গ্রুপের গ্রুপ কোম্পানি সেক্রেটারি নাসিমুল হাই।
এ বিষয়ে ক্রাউন সিমেন্ট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ খান বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত জিনিসটির নাম হচ্ছে পানি এবং দ্বিতীয়টি কংক্রিট। এর প্রধান উপাদান সিমেন্ট, বালি, পাথর এবং পানি। বাংলাদেশে দিন দিন এর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ ৮ শতাংশেরও বেশি। কারণ আমাদের দেশের নগরায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে। নগরায়নের সাথে সাথে সিমেন্ট এবং স্টিল এর চাহিদাও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, যা এই উভয় খাতের জন্য সুসংবাদ। ১০ বছর আগে ব্যাক্তিগত বাড়ি নির্মাণকারীদের অংশগ্রহণই ছিল বেশি কিন্তু বর্তমানে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে এই প্রকল্পগুলোকে ঘিরে ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, একটি সময় সিমেন্টের মূল উপাদান ক্লিংকার আমদানি করা হতো ভিয়েতনাম থেকে। কিন্তু বর্তমানে সিঙ্গাপুর, দুবাই, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে বিস্তার করেছে এই বাজার।
জিপিএইচ ইস্পাতের নির্বাহী পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, অনেকে আমরা কথার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করি। কিন্তু তা না করে বিবেচনা করে নিজেদের মেধা দিয়ে বিনিয়োগ করুন। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে জিপিএইচ ইস্পাত সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে। যেখানে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ খরচ অনেক কম এবং পরিবেশ দূষণ হবে হবে না। বর্জ পদার্থগুলো পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া কোন দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে এ খাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বসুন্ধরা গ্রুপের গ্রুপ কোম্পানি সেক্রেটারি নাসিমুল হাই বলেন, একটি সময় ছিল যখন রাস্তাঘাট নির্মাণে বেশিরভাগ বিটুমিন ব্যবহার করা হতো। যার ফলে রাস্তা টেকসই হয় না। কিন্তু আস্তে আস্তে কংক্রিটের ব্যবহার বাড়ছে, যা রাস্তাকে বিটুমিনের চেয়ে বেশি টেকসই করে।আমরাও এসব কথা মাথায় রেখেই সামনে আগাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমরা ক্যাপাসিটি বিল্ড-আপে জোর দিয়েছি। আশা করছি আগামী জুন মাসের পর থেকে এর ফলাফল পাওয়া যাবে। সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন বাড়বে। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভবনার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।