ভবনের প্রতি ইঞ্চি জায়গা লাভজনক ব্যবহার করে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না : প্রধানমন্ত্রী

951

ঢাকা, ৫ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কিছু অতি উৎসাহী লোকের কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মনমানসিকতার পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে আগুন নেভানোয় সহায়তা করার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন কোথাও আগুন লাগে সেখানে শুধু শুধু বিপুল সংখ্যক জনগণ জড়ো হয়ে দমকল কর্মীদের আগুন নেভানোর কাজে বিঘেœর সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে অনেকে আছে যারা কেবল কি হচ্ছে দেখার জন্য যায় এবং মোবাইলে সেলফি তোলে, আমি বুঝি না এখানে সেলফি তোলার কি আছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার ছবি না তুলে তারা কয়েক বালতি পানিওতো এগিয়ে দিয়ে আগুন নেভানোয় অংশ নিতে পারে, তাদের আসলে মানসিকতাটার পরিবর্তন দরকার এবং কিভাবে আগুন নেভানোয় সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার প্রারম্ভিক ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় আগুন লাগলে এখন পাানি পাওয়া যায় না। অথচ, ঢাকায় এত খাল ছিল, এত পুকুর ছিল, অথচ এখন নাই। কজেই যারাই কোন স্থাপনা করবে সেখানে যেন জলাধার টিকে থাকে। আর পুকুর দেখলে তার মধ্যে দালান করা এটাও একটা প্রবণতা, যেটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, গুলশান লেক এখন যা আছে তার দ্বিগুণ চওড়া ছিল। একেক জন ক্ষমতায় এসেছে, জিয়া এসেছে অর্ধেক ভরাট করে প্লট বানিয়ে দিয়েছে। এরশাদ এসেছে প্লট বানিয়েছে। খালেদা জিয়া এসে প্লট বানিয়েছে। এভাবে বানাতে বানাতে লেকের অর্ধেক আছে। আর বনানী লেকটাতো বন্ধই।
সরকার প্রধান বলেন, এভাবে জলাধারগুলো একে একে করে বন্ধ করা, এটাও বোঝা উচিত যে আগুন লাগলে পানি নাই। ভূমিকম্প হলে কোথাও গিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নাই। তাহলে অবস্থাটা কি দাঁড়ালো।
তিনি বলেন, দালানগুলো এমনভাবে বানানো হয় যে তার ফায়ার এক্সিট থাকে না, ইন্টেরিয়ার ডেকোরেশন করতে গিয়ে ফায়ার এক্সিট বন্ধ। সেখান দিয়ে কারো ওঠার উপায় নাই, নামারও উপায় নাই। মার্কেটগুলোতে ফায়ার এক্সিট মাল রাখার জন্য বা স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন লাগলে দায়িত্ব হচ্ছে ফায়ার বিগ্রেড আগুন নেভাবে। কিন্তু আগুন যাতে না লাগে যারা দালানগুলো বানায়, যারা বসবাস করে, যারা ব্যবহার করে- সকলেরই দায়িত্ব আছে।
সেই দায়িত্বটা পালন না করে কোন ঘটনা ঘটলেই কেবল কেবল সরকারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ আমরা বার বার বলি, যখন ডিজাইন দেয়া হয় তখনো বলি। যারা স্থাপনাগুলো ব্যবহার করছেন তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব, যেন সেখানে আগুন না লাগে। অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা যেন থাকে। আর সাথে সাথে কি করতে হবে সেটাও যেন দেয়া থাকে।
শেখ হাসিনা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ভবনের প্রতি ইঞ্চি জায়গা লাভজনক ব্যবহারের জন্য নিজেদের সর্বনাশটা যেন কেউ ডেকে না আনে। সর্বস্বান্ত না হন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত কয়েকদিন থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আগুন লাগলো বহুতল ভবনে, এর পরপরই আগুন লাগলো মার্কেটে। প্রতিদিনই এই আগুন। যদিও প্রতি চৈত্র-বৈশাখ মাসে আগুন লাগার একটা প্রবণতা থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস যখন আগুন নেভাতে যায় আমাদের কিছু লোক খামাখা উত্তেজিত হয়ে সেই ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের গায়ে হাত দেয়, তাদেরকে মারে। একটা গাড়ি পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে। প্রায় ৯/১০ কোটি টাকার গাড়ি। সেই গাড়ির ওপর হামলা করে গাড়ি ভেঙ্গেছে। দেরি হচ্ছে কেন এই অযুহাতে তাদের মারছে।
তিনি বলেন, কিন্তু যারা উদ্ধার করতে যায় তাদেরকে বাধা দেওয়া, তাদের ওপর হামলা করা এটা কোন ধরনের কথা। এই যে আজকে যে ছেলে সে উদ্ধার করতে যেয়ে আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কই তার খোঁজ তো নিতে গেলেন না।
এ সময় দমকল বাহিনীর আহত সদস্যকে সুচিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
শেখ হাসিনা অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দমকল বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, আমাদের ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স খুব দ্রুততার সাথে উদ্ধার কাজ চালিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি সাধুবাদ জানাবো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তারা এগিয়ে এসেছে। ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছে, ফায়ার সার্ভিসকে রাস্তা করে দিয়েছে।
যারা প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক তারাও কাজ করেছে। সাধারণ মানুষেরাও অনেকে দায়িত্বের সাথে কাজ করেছে।
মানুষ সব সময় এমন দায়িত্বশীল আচারণ করবে, এটাই আমরা চাই উল্লেখ করে এক্ষেত্রে মিডিয়ারও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী অগ্নি দুর্ঘটনায় নিতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদসদের প্রতি সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশে হঠাৎ করে আমেরিকা কেন সিকিউরিটি অ্যালার্ট দিয়েছে তার কোন কারণ দেশটির পক্ষ থেকে সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয়নি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সরকারকে অ্যালার্টের কারণ জানানো আমেরিকার দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হঠাৎ দেখলাম আমেরিকা একটা সিকিউরিটি অ্যালার্ট দিয়েছে। কি কারণে তারা এলার্টটা দিল তারা সেটা কিন্তু আমাদের কাছে বলেও নি, ব্যাখাও দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘যদিও আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি গোয়েন্দাদের যে কি কারণে এলার্ট দিয়েছে তাদের কাছে কোন তথ্য আছে কি না। যদি কোন তথ্য থাকে, কোন ঘটনা ঘটতে পারে এমন যদি তাদের কাছে তথ্য থাকে তাহলে একটা দায়িত্ব আছে তাঁদের আমাদেরকে অন্তত সেই বিষয়টা জানানো। বা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জানানো। যেন আমরা তা মোকাবেলা করার ব্যবস্থা নিতে পারি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ আগুন লেগেছে সেখানে- আগুন তো সব দেশেই লাগে। ওই আমেরিকাতেও একটা সার কারখানা থেকে শুরু করে হাসপাতাল সবই পুড়ে শেষ। কতজন মারা গেছে সেই খবর কেউ জানেও না। এ রকম বহু ঘটনা ঘটেছে। লন্ডনে আগুন লেগে ৭০ জন মারা গেল। আরও যে কত লোক মারা গেছে সেটার হিসেবও নেই। সেখানে হিসেবও হয় না। উদ্ধার কাজও আমাদের মতো এতদিন কেউ চালায় না।
তিনি সন্ত্রাসকে কেবল বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বের সমস্যা আখা দিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাস শুধু আমাদের দেশের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশ অন্তত সফলতার সাথে এই জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছে।
‘আমরা যথেষ্ট সজাগ, আমাদের ইন্টেলিজেন্স সব সময় সজাগ। আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তারা সব সময় সর্তক। এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। এখন যদি তাদের কাছে কোন তথ্য থাকে, তবে তাদের কর্তব্য আমাদের জানানো,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিএনপি’র নির্বাচনে ভরাডুবি, যার নেপথ্যে মনোনয়ন বাণিজ্য এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিংয়ের খতিয়ান তুলে ধরে বিদেশে অবস্থানকালীন তার রাজকীয় জীবন যাপনেরও কঠোর সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের তাদেও পরাজয় নিশ্চিত জেনেই প্রতিটি আসন নিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে।’
শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, ‘তার (তারেক) রাজকীয় জীবনযাপনের টাকা আসে কোত্থেকে? বিএনপি ক্ষমতায় থেকে যে লুটতরাজ করেছে, সেই অর্থ থেকেই তারেক লন্ডনে উচ্চবিলাসী জীবনযাপন করছেন।’
’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশবিরোধী রাজনীতি করছেন। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বছরের পর বছর লন্ডনে থেকে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
এদিকে সভায় ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে সাবেক পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটুকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে ।
রাতে আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনের উন্নীত হওয়ার গেজেট প্রকাশের পর, বিলুপ্ত হয় ইকরামুল হক টিটুর পৌরসভার মেয়র পদ। বাংলাদেশের দ্বাদশ এই সিটি করপোরেশনের আয়তন ৯১ দশমিক ৩১৫ বর্গকিলোমিটার। যার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ১০৯ জন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ৫ মে। ৮ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং ১৭ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ধার্য করা হয়েছে।