খুলনার দাকোপে লবণাক্ত ও পতিত জমিতে গম ও সূর্যমুখী চাষের সম্ভাবনা

422

খুলনা, ৪ এপ্রিল ২০২১৯ (বাসস) : দক্ষিণ- পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালিতে রোপা আমন কাটার পর লবণাক্ত পতিত জমিতে রবি মৌসুমে সূর্যমুখী ও গম চাষে সফলতার সম্ভাবনা দেখছেন গবেষকরা। পতিত জমিতে গম ও সূর্যমুখী চাষে কৃষকেরা বিঘা প্রতি ৬-৮ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন বলে গবেষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এ অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে লবণাক্ত জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন। এরই ধারাবাহিকতায় দাকোপের পানখালিতে রোপা আমন ধান কাটার পর রবি মৌসুমে সূর্যমুখী ও গম চাষে সফল হয়েছেন এ ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. এনামুল কবীর এবং উপ-গবেষক সহকারী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র সরকার। দাকোপের পানখালিতে ১০ বিঘা (প্রায় ১.৫ হেক্টর) জমিতে দুটি গবেষণা প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অষ্ট্রেলিয়ার একটি সরকারি সংস্থা (অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্স (এসিআইএআর) এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ)-এর যৌথ অর্থায়নে খুবিসহ বাংলদেশ, ভারত ও অষ্ট্রেলিয়ার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানদুটি সমন্বিত গবেষণা প্রকল্পে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে উপ-গবেষকসহকারী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র সরকার বলেন, প্রথম প্রকল্পে আমরা নির্বাচন করার চেষ্টা করেছি যে, এখানে রবি মৌসূমের কোন কোন ফসল চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত এবং এ পরিবেশে টিকে থাকবে কি না। আমরা অনেকগুলো ফসল নিয়ে কাজ করেছি যেমন গম, সরিষা, সূর্যমুখী, ভুট্টা, মটর ইত্যাদি। এদের মধ্যে সূর্যমুখী ও গম (তিন বছর) সফলভাবে চাষ করা সম্ভব হয়েছে। এরপর সূর্যমুখী ও গম এর সার ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য চাষাবাদ কৌশল নিয়ে আমরা দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা, এর উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, সূর্যমুখী এমন একটি ফসল যা এ লবণাক্ত অঞ্চলে হচ্ছে, এর ফুল ধারনের উপর দিনের দৈর্ঘ্যরে কোন প্রভাব নেই, মৌসুম এর কোন প্রভাব নেই, দেরিতে লাগালেও হচ্ছে। এর মুল মাটির গভীর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না লাগালে ফুল ফুটবে না এমন কোন বিষয় নেই। এজন্য এটি বরি, খরিফ-১ এবং খরিফ-২ এ তিন মৌসুমেই করা যাবে তবে বরি মৌসুমে এর ফলন বেশী। এতে করে কৃষক এবং সর্বোপরি সরকার লাভবান হবে। কাজেই সূর্যমুখী এ অঞ্চলের জন্য একটি কার্যকরী ফসল বলে আমি মনে করি।
মুখ্য গবেষক অ্যধাপক ড. মো. এনামুল কবীর জানান, সূর্যমুখী ও গম যে এখানে হয় এবং হবে তা বিগত কয়েক বছরের গবেষণায় আমরা সুনিশ্চিত। রোপা আমন কাটার পর মাটিতে যে অতিরিক্ত আদ্রতা থাকে এ অবস্থায় মাটিতে বিনাচাষে সূর্যমুখী ও গম দিলে সেটা গজাচ্ছে। কিন্তু অন্য ফসল সেটা সহ্য করতে পারে না ।বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা মারা যায়। রবি মৌসূমে সূর্যমুখী ও গমচাষের নতুনপ্রযুক্তি (সার, পানি, লবণাক্ততা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা) কৃষকদের দিতে পারলে এ এলাকায় রোপা আমনের সাথে তারা অতিরিক্ত একটি ফসল পাবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবে। সূর্যমুখী চাষে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও ভূমিকা পালন করবে এবং কৃষকরা নিজেরাও সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করতে পারবে। তিনি বলেন এ অঞ্চলে সূর্যমুখী ও গমের ভাল ফলন পেতে উচ্চ ফলনশীল এবং স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন আমন ধান একটু আগে লাগিয়ে এবং একটু আগে কেটে মাটিতে অতিরিক্ত আদ্রতা থাকা অবস্থাতেই বিনা চাষে সূর্যমুখীও গমের বীজ বপন করলে এমনকি সূর্যমুখীর চারা রোপণ করেও চাষ করা যায়। এতে করে লবণাক্ততা তীব্র হওয়ার আগেই ফসল কাটার উপযোগী হয়।
তিনি আরও জানান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন গাইডে সূর্যমুখীর কোন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন এ অঞ্চলের জন্য নেই।এ প্রকল্প দুটির সফল সমাপ্তি পর এ অঞ্চলের জন্য সূযমুখী এবং গমের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য চাষাবাদ কৌশল প্রতিষ্ঠা করা যাবে এবং কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যাবে। এছাড়াও পানখালির কৃষক শংকর প্রসাদ বলেন সূর্যমুখী ও গম চাষের ফলে আমরা রোপা ধানের সাথেও অতিরিক্ত একটি ফসল পাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও পাব। এ সূর্যমুখী এবং গম চাষের ফলে আমরা লাভবান হব এবং তাতে আমরা অনেক খুশি।