বগুড়ায় বিদ্যুতের আলোর ফেরিওয়ালার রিকশা ভ্যানে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিয়ে ছুটছে গ্রাম থেকে গ্রামে

352

বগুড়া, ৩১ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বগুড়ার ১২টি উপজেলায় প্রায় শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বগুড়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে এখন দারুণ এক কর্মযঞ্জ চলছে। বিদ্যুতের ফেরি ওয়ালার রিকশা ভ্যান বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিয়ে ছুটছে গ্রাম থেকে গ্রামে। কোন ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ব্যস্ত আলোর ফেরিওয়ালার রিকশা ভ্যান। এতে একদিকে গ্রাহকরা যেমন খুশি তেমনি ফেরিওয়ালার গাড়ি করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পেরে বিদ্যুৎ কর্মীরাও তৃপ্ত।
জেলায় ১০ হাজার ৯৩৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইনের মধ্যে মাত্র ১০০ কিলোমিটার বাকি রয়েছে। তাও চলতিমাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে এমটাই আশাবাদ বাক্ত করছেন বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সামতি ও নেসকো। নেসকোর তার এলাকায় অনেক আগেই শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। তারা ৪ হাজার ৮৬৫ কিলোমিটার অধীনে ৬ টি উপজেলার সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছে। বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ৪ হাজার ২২১ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারিত করেছে। তাদের আর মাত্র বাকি রয়েছে ১০০ কিলোমিটার। যা চলতি মাস অথবা আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে শেষ করতে পারবে এমনটাই জানালে সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুস। বগুড়ায় নেসকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকেীশলী আব্দুর রশিদ জানালেন, তাদের কাছে সংযোগের কোন ফাইল পড়ে নেই। গ্রাহক আসামাত্রই ওয়্যারিং সম্পন্ন থাকালেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
বগুড়া সদর থানার শাখারিয়া ইউনিয়নের কদিম পাড়ায় এলাকার আনোয়ার হোসেন জানান,তারা এতো দিন অন্ধকারে ছিলেন। রোববার আলোর ফেরিওয়ালা কাগজপত্র পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে সংযোগ পাবার পর অন্ধকার থেকে আলোর পথে এসেছে। তারা এতোদিন হারিকেন ও মোমবাতি আলোতে কাজ করেছেন। রাতে ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা করেছে অনেক কষ্টে। এতোদিন ঠান্ডা পানিতে তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি আনোয়ার হোসেন। এখন সে রেফ্রিজেটার কিনবে বলে জানান। গরম সহ্য করতে পারবেনা। বিদ্যুতের এ সমস্য সমাধান হওয়ার তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে কার্পণ্য করেননি।
বগুড়া সদর থানার শাখারিয়া ইউনিয়নের জঞ্জল পাড়ার আব্দুল কাফি রোববার বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। বিদ্যুৎ পাওয়ার পর আবেগে আপ্লুত হয়ে বাকরুদ্ধ প্রায়। বিদ্যুৎ সংযোগ হবে শুনে শনিবার রাতে তার চোখে ঘুম আসেনি। অবশেষে রোববার এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। সকালে তার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালোন ‘আলোর ফেরিওয়ালার’ রিকশা ভ্যান। আগেথেকে ওয়্যারিং প্রস্তুত ছিল । সংযোগকারী এলেন ৫ মিনিটে সংযোগ দিলেন। এরপর সুইচে টিপ দিতেই আলোই ঝলমল করে উঠলো ঘর। এ যেন রুপকথার গল্প। বিদ্যুতের সংযোগের জন্য ১১৫ টাকা আবেদন ফি, ৪০০ টাকা সিকিউরিটি ফি এবং ৫০ টাকা সদস্য হওয়ার ফি। আর কোন টাকা নয়। কাফি বল্লেন, আগে মনে করেছিলাম আলোর ফেরিওয়ালা আবার কি ? আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতায় আমাদের আশার বাণী শোনাতেন। এখন এটা আর আশার কথা নয় বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব। শহর থেকে ৬ িিকলোমিটার দূরে থেকেও তারা এতোদিন অন্ধকারে থেকেছেন। তা ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তারা এতো দৌড়-ঝাপ করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। আজ অন্ধকারের অবসান ঘটেছে।
সংযোগ প্রদান কারি ওয়্যারিং পরিদর্শক জানালেন তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ দিতে পেরে ,মানুষে সেবা করতে পেরে খুব খুশি। মানব সেবা করা মত কাজ আর হয়না। যে যার অবস্থান খেকে মানুষের সেবা করলে দেশ অনেকে আগেই উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে যেত।
তিনি বলেন বিনা হয়রানীতে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে মানুষের যে আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আলোর ফেরিওয়ার রিকশা ভ্যান গ্রাহকের দোর গোড়ায় পৌঁছলে শিশু, নারী-পুরুষের বাধ ভাঙ্গ উচ্ছাস। তিনি এমনও দেখেছেন সংযোগ দেয়ার আগের দিন তারা টেলিভিশন কিনে ফেলেছে। অনেকে ফ্রিজও কিনেছে। গ্রামের মানুষ তাদের “ফেরিওয়ালা” ভাই বলে ডাকে। সংযোগের পর আদর আপ্যায়ন করতে ভোলেন না গ্রাহকেরা।